হুমকি-ধমকেও মাঠ ছাড়বেন না আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা মাঠ ছেড়ে দেবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হলেও এসব প্রার্থীরা বলছেন নির্বাচনেই আছেন তারা। পাশাপাশি তাদের সাথে জুড়ে দেওয়া ‘বিদ্রোহী’ শব্দটির প্রতি আপত্তির কথা বলছেন তারা। নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করার দাবি জানাচ্ছেন এসব প্রার্থী। বলছেন প্রশাসনের চাপ নিয়ে অসন্তোষের কথাও।

বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে যেতে রাজি হয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে যারা দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের বাইরেও কিছু প্রার্থী আছে। সে বিষয়ে আজকে বৈঠক করেছি। তারা একমত পোষণ করেছে যে, তারা আর প্রচারণা করবেন না। দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন এবং তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। প্রায় সবাই একমত হয়েছেন।‘

বৈঠকে শিক্ষা ‍উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুও ছিলেন।

তবে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন তারা। অনেকে বলেছেন এই ধরনের কোন বৈঠকের বিষয়েই জানেন না তারা। যদিও সংবাদ সম্মেলনে মেয়র নাছির দাবি করেছিলেন সকল বিদ্রোহী কাউন্সিলরকে ডেকেছেন তারা।

১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে এই ধরনের কোন মিটিংয়ে কেউ ডাকেওনি। আমি এই বিষয়ে কিছু জানিও না। আমি নির্বাচনে আছি।’

২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হওয়া বর্তমান কাউন্সিলর এইচএম সোহেল বলেন, ‘আমাদেরকে দল মনোনয়ন দেয়নি এটি তো সত্য। কিন্তু এলাকার জনগণের দাবির মুখে আমাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে। আলাপ আলোচনা করেই আমরা নির্বাচন করছি। আর আপনারা যেসব বলছেন পেনিনসুলায় মিটিংয়ের কথা। কই আমাকে তো কেউ এমন মিটিংয়ে ডাকেনি। এসব বিষয়ে কিছুই জানি না আমি।’

২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এসএম এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘ফোন করেছিল। শরীরটা খুব খারাপ। সেজন্য যাইনি। আমাকে কেউ ইলেকশন থেকে সরে যেতে বলেনি। আমি ইলেকশন করবই।’

২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের বিদ্রোহী কেন বলা হচ্ছে সেটাও বুঝতে পারছি না। আমরা কার সাথে বিদ্রোহ করলাম? এটা তো দলীয় প্রতীকের নির্বাচন না। এমনকি কেউ পোস্টারে নিজেদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সুযোগও নেই। তাহলে আমরা বিদ্রোহী হলাম কিভাবে?’

নির্বাচন থেকে সরে যেতে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর প্রার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নেতারা শুধু নন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে আমরা যেন দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করি। এজন্য তারা ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে।’

এই বিষয়ে নিজের বিরক্তির কথা জানিয়ে ওই প্রার্থী বলেন, ‘তারা (গোয়েন্দা সংস্থা) এটা কেন করবেন? ৪ দশক ধরে দল করি আমি। দলের জন্য আমরা কত জেল জুলুমের শিকার হয়েছি। এখন আমাদের চেয়ে উনারা দলের কথা বেশি ভাবেন। উনারা আমাদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হয়ে বসে আছেন। এটা তো ঠিক না। যা হবে হোক। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!