হুমকির মুখে চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ

হুমকির মুখে চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: একপাশে মাতামুহুরী নদী। অপরপাশে ঘনবসতি। মাঝখানে বেড়ি বাঁধ। যে বাঁধটি সবাই জানে শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে। উজানে বৃষ্টি হলেই নেমে আসা পানির ধাক্কায় বাঁধটি অবস্থা হয় টলমলায়ন।একসপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ৫০ গজ ভুমিসহ ছয়টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। ফাটল ধরেছে বাঁধে। যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে বাঁধটি।
এই অবস্থায় অপর পাশের বাসিন্দারা রয়েছে চরম আতংকে। তাদের না খাওয়া এখন হারাম। নারী-পুরুষ এককাট্টা হয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। ভাঙ্গন বাঁধ পর্যন্ত পৌছে যাওয়ায় আতংক আরো বেড়ে গেছে তাদের। ফলে দুইদিনেই ১৬টি বসত ঘর নিজেরাই সরিয়ে নিয়েছে। অর্ধশতাধিক ঘরের সদস্যরা মালামাল অন্যত্র নিয়ে গেছে। এই আতংকময় দৃশ্য বিরাজ করছে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের দিগরপানখালী গ্রামে।
সরজমিন ঘুরে বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এক সপ্তাহ পূর্বেও বাঁধ ও মাতামুহুরী নদীর মাঝখানে অন্তত ৫০গজ দৈর্ঘ্যরে ভিটে-জমি ছিল। সেখানে ছিল ৬টি কাঁচা-পাকা ঘর। যা ৭দিনের ব্যবধানে স্মৃতিচিহৃ হয়ে পড়েছে।
গণি সিকদার পাড়ার বাসিন্দা মো.মিজান ও হালিম বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গন ঠেকাতে বর্ষার আগেই সরকার পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় মানুষের জানমাল রক্ষাকারী বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। জুন মাসের আগে বাঁধ সংলগ্ন নদীর তীরে ব্লক, বালি দেয়ার কথা থাকলেও ব্লক দেয়া হয়নি। ভাঙ্গন শুরু হলে নিকটস্থ বিভিন্ন বাসিন্দাদের ভিটে থেকে কয়েকশত গাছ কেটে এনে নদীতে পুতে স্পার বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা অল্প পানির ধাক্কায় ওই স্পার বাঁধ পানিতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হলে গাছগুলো মালিকদের ফেরত না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নিজেরাই নিয়ে যায়। ফলে, সড়ক কাম বাঁধে ফাটল ধরেছে। যেকোন মহুর্ত্বে ওই বাঁধ ভেঙ্গে পৌরশহরে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
গতকাল স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত কয়েকমাস পূর্বে বাঁধ ও নদীর মাঝে জমির কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলে ওই স্থান থেকে মাটি তুলে রাস্তা নির্মাণ ও বাঁধ উচু করার চেষ্টা করায় নদীর গ্রাসের মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধটি। পৌরশহর রক্ষা বাঁধটি অতি ঝুঁকির মুখে পড়ায় দু’দিনের মধ্যে বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা গোলাম সোবাহান, আলী আহমদ, পেঠান, আবছার, দানু মিয়া, আবু ছালাম ও করিমসহ ১৬পরিবার ঘরের মালামাল নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। আরো অর্ধশত পরিবার সরে যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসী দাবী করে বলেছেন, জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে ঠিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা না হলে শত শত পরিবার আশ্রয়স্থল হারিয়ে পথে বসবে। আর এসব আশ্রয়হীন পরিবারগুলোকে পুর্ণবাসন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জোর দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, পৌর শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষার জন্য সব কিছু করা হবে। ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি বর্তমানে খুবই হুমকির মুখে। এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পৌরশহরে ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক টিকিয়ে রাখাও দু:সাধ্য হয়ে পড়বে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, নদী তীরের গাছ কাটার ফলে বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে সেটা মানুষদের ভ্রান্ত ধারনা। আসল বিষয় হচ্ছে নদীর খনন জরুরী এবং স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষা জন্য জরুরুী ভিত্তিতে স্পার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু উজান থেকে পানির চাপ বেশি থাকায় স্পার দেয়া সম্ভব হয়নি। ঠিক সমযে যদি ব্লক বসানো হতো তাহলে বাঁধটি এভাবে ভাঙ্গতো না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!