হুট করে দলে রনি, বাংলাদেশ দলে আসতে পারে পরিবর্তন

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের পর শনিবার টাইগারদের অপশনাল প্র্যাকটিস সেশনে হঠাৎ দেখা মিললো বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির। মনে হচ্ছিল, নেট বোলার হিসেবেই বুঝি বোলিং করেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর রাত গড়াতেই বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, আবু হায়দার রনিকে দলে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য যে ১৩ সদস্যর দল ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে সংযোজন আবু হায়দার রনি। কিন্তু কেন? হঠাৎ কী হলো যে একজন পেসার বাড়ানো হলো? বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া থাকলে তবু একটা কথা ছিল। কিন্তু তা তো আর নেই।

শনিবার সারাদিন ছিল কাঠফাটা রোদ। এমন শুকনো আবহাওয়ায় বাড়তি পেসারের অন্তর্ভুক্তি খানিক বিস্ময়ের খোরাক বৈকি। ‘কী কারণে হঠাৎ আবু হায়দার রনিকে দলে নেয়া হলো?’ প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, ‘এমনি এমনি রনিকে নেয়া হয়নি। আমরা বাধ্য হয়েছি। কারণ পেসার ইয়াসির আরাফাত মিশু আহত। তার সাইড স্ট্রোইন হয়েছে। তার বিকল্প হিসেবেই আসলে রনিকে দলে নেয়া হয়েছে।’

নান্নু জানান, দ্রুতগতির বোলার তাসকিন আহমেদও সাইড স্ট্রেইনে ভুগছে। তার ব্যাখ্যা, না হয় তাসকিন হতে পারতেন ফাস্ট চয়েজ। কিন্তু তার পক্ষেও খেলা সম্ভব নয়। সাইড স্ট্রোইন ইনজুরির শিকার হওয়া তাসকিনকে চার সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। তাতেই কপাল খুলে গেছে বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির।

বাংলাদেশ দলে আসছে পরিবর্তন
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটিই শেষ হওয়ার পর নতুন করে দল ঘোষণা হবে। এখন প্রশ্ন হলো, তবে কি এই ১৩ জনই থাকবেন? না দলে রদবদল হবে, সংযোজন-বিয়োজন ঘটবে? ভেতরের খবর, দলে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রচুর। টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিন থেকে চারটি পরিবর্তনের চিন্তা চলছে।

রোববার আফগানদের বিপক্ষে ভাল খেলতে না পারলে হয়ত অন্তত দু থেকে তিন জনের কপাল পুড়তে পারে। কারা তারা? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? তাহলে শুনুন, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পারফরমেন্স পাখির চোখে পরখ করা হচ্ছে। একদম নিরাপদ নন লিটন দাসও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভাল খেলতে না পারলে এই চার জনের যে কোন দুজন বাদ পড়ে যেতে পারেন।

নির্বাচকদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে মিলেছে তেমন আভাস। ওপরে যাদের কথা বলা হলো পরিসংখ্যানও তাদের বিপক্ষে। পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের একজনও নিকট অতীতে সে অর্থে ভাল খেলেননি। আসুন, সৌম্য, সাব্বির ও মাহমুদউল্লাহর সাম্প্রতিক বিশেষ করে গত এক বছরের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি পারফরমেন্সটা এক নজরে দেখে নেই:

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের আগে থেকেই ভূগছেন রানখরায়। রোববারও রান না পেলে বাদ পড়তে পারেন দল থেকে।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের আগে থেকেই ভূগছেন রানখরায়। রোববারও রান না পেলে বাদ পড়তে পারেন দল থেকে।

সিনিয়র পারফরমার মাহমুদউল্লাহর সর্বশেষ ১৫ ওয়ানডেতে (১৩, ৭, ১৬ , ৩০*, ৩৫*, ১৯*, ৪৬*, ২০, ২৮, ৬৯, ২৭, ২৯ , ৩, ৬, ৯) করেছেন সাকুল্যে ৩৫৯ রান। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শেষ ১৫ ম্যাচে (১, ২০, ১১, ৪৩*, ২১, ২৯, ১৪, ৪৫, ৩৫, ১৩, ৩২, ১২, ৪৩*, ১১, ১৪) সংগ্রহ ৩৪৪।

অন্যদিকে সৌম্য সরকার শেষ ১৭ ওয়ানডেতে চার ফিফটিসহ (৩০, ২২, ০, ৭৩, ৫৪, ৬৬, ৪২, ২৫, ২, ২৯, ১০, ৩, ৩৩, ২২, ১৫, ১১, ৬৯) ৫০৬ রান করলেও, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চরম ব্যর্থ। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে শেষ ১৫ ম্যাচে সৌম্যর পারফরমেন্স খুব খারাপ। মাত্র ৬ বার ছুঁয়েছেন দু অঙ্ক, ২ বার শুন্য এবং রান সাকুল্যে (০, ১৪, ২৪, ১, ১০, ১, ৩, ১৫, ০, ১৪, ৫, ৫, ৩২, ৯, ৪) = ১৩৬।

সাব্বির রহমানের অবস্থাও প্রায় এক। ওয়ানডেতে শেষ ১১ ম্যাচে তিনবার আউট হয়েছেন শুন্য রানে। এ বছর ২০ ফেব্রুয়ারি ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি (১০২) বাদ দিলে সাব্বিরের অবস্থা খুব খারাপ। মোট রান (১৩, ৪৩, ০, ৭, ০, ০, ৩৬, ৬০, ১১, ৭) ১৭৭। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শেষ ১৫ খেলায় (৪৮, ১৮, ১৬, ১৯, ১৯ , ৫, ১, ৩০, ০, ২৭, ১৩, ৭৭, ০, ১৩, ১৫ ) = ৩০১ রান করলেও দুবার শুন্য রানে আউট হবার পাশাপাশি আরও দুবার দুই অংকে পা রাখতে পারেননি।

সাব্বির রহমানও আছেন রান না পাওয়ার তালিকায়।
সাব্বির রহমানও আছেন রান না পাওয়ার তালিকায়।

শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও এ তিনজনের কেউ ভাল খেলেননি। মাহমুদউল্লাহ ৯, সৌম্য ৪ ও সাব্বির ১৫ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। যদি রদবদলের ঢেউ আছড়ে পড়ে এই তিন প্রতিষ্ঠিত পারফরমারের সবাই বা দুজন বাদ পড়েন, তাহলে তাদের জায়গায় আসবেন কারা?

নির্বাচকদের কথায় পরিষ্কার আভাস, আগে খেলা এবং এইচপির তরুণদের মধ্য থেকেই অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। মোহাম্মদ মিঠুন, সাঈফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত আর নাইম শেখের যে কোন দুজনের দলে ঢোকার সম্ভাবনা প্রচুর। ইতিহাস জানাচ্ছে, দেড় বছর আগে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে আনা হয়েছিল বড় ধরনের পরিবর্তন।

চিরায়ত প্রথা ভেঙ্গে নির্বাচকরা হঠাৎই আফিফ হোসেন ধ্রুব, উইকেট কিপার জাকির হোসেন, নাজমুল অপুৃ ও আরিফুল হককে দলে নিয়েছিলেন। জাকির আর আফিফ কিছু করতে পারেননি। তারপর জাকির আর ডাক পাননি। দেড় বছর পর আবার দলে জায়গা পেয়ে এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০.০০ স্ট্রাইকরেটে ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন আফিফ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!