‘হুইপ ইস্যু’—চট্টগ্রামে দু’গ্রুপের কর্মসূচি, সংঘাতের শংকায় অনুমতি দেয়নি পুলিশ

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রাজনীতির উত্তাপ ছড়াচ্ছে এবার চট্টগ্রাম নগরে। হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে ‘ঠেকাতে’ একপক্ষ নেমেছে মাঠে। আবার হুইপের অনুসারীরাও কম যান না। তারাও সক্রিয় হয়েছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

একইদিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই দুই পক্ষ ডাক দিয়েছে সমাবেশ ও মানববন্ধনের। এতে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি)। সংঘাতের আশংকার কথা বিবেচনায় কাউকে সমাবেশ ও মানববন্ধন করতে না দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ অনড় থাকবে বলে সিএমপি সূত্রে জানা গেছে।

তাই এখন পর্যন্ত কাউকে সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে ‘ঠেকাতে’ এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ তোলা হয়।

তবে কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগকে কাল্পনিক বলে মন্তব্য করেছেন হুইপের অনুসারী ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া সংগঠনগুলো।

মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিতের এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বুধবার (৯ জুন) সমাবেশের আহবান করে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদ নামের একটি সংগঠন। যদিও অতীতে এমন সংগঠন নাম শোনা যায়নি। সংগঠনটির অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে মুক্তিযোদ্ধারা।

অন্যদিকে একইদিন প্রেসক্লাবের সামনে হুইপ শাসসুল হক চৌধুরীকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচারে বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম পরিষদ পটিয়া উপজেলার নেতারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের আড়ালে মূলতই শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমাবেশের নেপথ্যে রয়েছে পটিয়ার বাসিন্দা যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম বদি—এমন অভিযোগ খোদ জহুর আহমেদ চৌধুরীর দৌহিত্র ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম পরিষদের আহবায়ক তাসবির হায়দার চৌধুরীর।

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদের একজন হুইপের বিপক্ষের মাঠে দেখছি ওই যুবলীগ নেতাকে। তার এলাকা পটিয়ার নির্বাচিত এমপির বিরুদ্ধে এমন কর্মসূচির প্রস্তুতি মিটিংয়েও বদিউল আলম বদি ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা উচিত না। জনগণকে উস্কে দেওয়ার রাজনীতি কখনোই আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনীতি হতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকলে উনিতো আইনী প্রতিকার চাইতে পারতো৷ কিন্তু তিনি তা করেননি কেন?’

তাসবির চৌধুরী বলেন, ‘টাকার খেলা চলছ। একটি বিশেষ শিল্পগ্রুপের টাকায় চট্টগ্রামে হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে টাকায় কিনতে চাচ্ছে তারা। এই লোভনীয় অফার আমাদেরকেও দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, টাকার বিনিময়ে আমাদের আবেগ বেচা-কেনা চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলা ও বাঙালির আবেগ। আমরা ওই বিশেষ শিল্পগ্রুপের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে বিক্রি করতে পারি না।

এ বিষয়ে আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম বদি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কোনো মাবনবন্ধন কিংবা সমাবেশ ডাকিনি। এটা মুক্তিযোদ্ধা জনতার সমাবেশ। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ও তাদের পরিবারবৃন্দ এ সমাবেশের মূল আয়োজক। আমি যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সব সময় ছিলাম, তাই ওই সামবেশে তারা আমাকে দাওয়াত দিলে যাব। না দিলেও সমাবেশের উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করব।’

কিন্তু সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি সভায়ও তাকে দেখা গেছে—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একই দিনের অন্য গ্রুপে সমাবেশ কেন করবে? এটাতো কোনো ব্যক্তিগত ইস্যু নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিবাদ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। একই দিনে কেউ যদি অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে, সমস্যা হলে প্রশাসন বুঝবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্মান সংরক্ষণ পরিষদ’র কো-চেয়ারম্যান নওশাদ মাহমুদ রানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে রোববার বিকেল ৪টায় প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ছিলাম ও আছি। যে কোনো উপায়ে আমরা সমাবেশ আমরা করবো।’

এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘রোববার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করতে কারো পক্ষে সিটিএসবি (পুলিশের বিশেষ শাখা) থেকে অনুমোদন আসেনি। আসলে জানাতে পারবো।’

মুআ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!