হিযবুতকাণ্ডে ৮ দিন ধরে ‘পলাতক’ কলেজ ছাত্র, পরিবারের দাবি ‘নিখোঁজ’

সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের হওয়া পুলিশের মামলায় আসামি হয়েও দিব্যি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিল রিদওয়ান আহমেদ সিয়াম (১৭) নামে চট্টগ্রাম সরকারী মহসিন কলেজের এক ছাত্র। ৮ দিন গ্রেপ্তারহীন থাকার পর তার পরিবার বলছে সে নিখোঁজ রয়েছে গত ৩০ নভেম্বর থেকে। গত ২২ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশের অভিযানে হিযবুত তাহরীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডারসহ ১৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনায় দায়ের হওয়া সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় এজহারনামীয় ১৮ নম্বর আসামি এই সিয়াম। পুলিশের দাবি, এজাহারনামীয় ২৫ জনের মধ্যে পলাতক ১০ আসামির মতো সিয়ামকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান, তবে কেউ গ্রেপ্তার নেই।

এদিকে পরিবারের দাবি, গত ৩০ নভেম্বর থেকে চকবাজার এলাকায় কোচিং সেন্টার এসে নিখোঁজ রয়েছে সিয়াম। এ সংক্রান্ত একটি জিডি (নম্বর- ১৬৬৬) করেছেন তার বাবা তোফায়েল আহমেদ। পুলিশ জিডির নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে নেমে জানতে পারে এই সিয়াম হিযবুত তাহরীর কর্মী সিয়াম। সে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়ার মামলার পলাতক আসামি। তাকে মামলা দায়েরের ৮ দিনেও গ্রেপ্তার করা না গেলেও পুলিশের এক কর্মকর্তার দাবি, মামলার আসামি হওয়ার খবর পেয়ে পালিয়েছে সিয়াম। তবে তার মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা করে জানতে পেরেছে সে ঢাকার মিরপুর এলাকায় অবস্থান করছে।

জানা গেছে, রিদওয়ান আহমেদ সিয়াম (১৭) চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চররামপুর গ্রামের নওজোয়ান সরদার বাড়ির তোফায়েল আহমেদের ছেলে। তাদের বাসা নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার পাশে। সিয়াম নগরীর সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের একাদশশ্রের্ণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।

গত ৩০ নভেম্বর চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া জিডিতে সিয়ামের বাবা তোফায়েল আহমেদ উল্লেখ করেছেন, গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে সিয়াম বাসা থেকে বের হয়ে রাত পর্যন্ত বাসায় ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে চকবাজার থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে পরনে গেঞ্জি, গায়ের রং কালো ও উচ্চতা ৫ ফুট বলে উল্লেখ করা হলেও সিয়ামের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীর চকবাজারে ওমেগা সাইয়েন্স পয়েন্ট কোচিং সেন্টারে পড়তে যায় সিয়াম। দুই বিষয়ে পৃথক শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে সহপাঠিদের সাথে কোচিং সেন্টার থেকে বের হলেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। সিয়ামের দুই সহপাঠির একজন হালিশহর বড়পোলে এবং আরেকজন ঈদগা কাঁচা রাস্তা এলাকায় তাদের বাসায় খোঁজ নিয়েও জানতে পারেনি সিয়াম কোথায় গেছে। এরপরই রাতে চকবাজার থানায় জিডি করেন সিয়ামের বাবা তোফায়েল আহমেদ।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় হিযবুত কর্মীদের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত ছিল। তবে সিয়াম আগে থেকেই আত্মগোপনে ছিল। এরই মধ্যে যখন ৩০ নভেম্বর মহসীন কলেজের ছাত্র নিখোঁজের জিডি হয় সেটির তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, এই নিখোঁজ ছাত্রই হিযবুত কর্মী সিয়াম। যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলায় রয়েছে কোতোয়ালীতে। তদন্তকালে গ্রেপ্তার ১৫ হিযবুতকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে হিযবুত তাহরীরের নতুন রিক্রুট সদস্যদের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ ক্লাস নিত সিয়াম। সে নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করে। এরপর সরকারী মহসীন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়।

জানতে চাইলে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এডিসি ও হিযবুত তাহরীরের মামলাটির তদারক কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সিয়ামসহ যারা পলাতক রয়েছে তাদের তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রিমান্ডে আনা আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। তদন্তে যেসব তথ্য আসছে সব যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। কিন্তু সিয়ামের বিষয়ে স্পেসিফিক কোনও তথ্য জানা নেই এই পর্যন্ত।’

এর আগে গত ২২ নভেম্বর রাতভর অভিযান চালিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে হিযবুতের আঞ্চলিক কমান্ডার এরশাদুল আলমসহ ১৫জনকে গ্রেপ্তার করেছিল কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ওই সময় আরও গ্রেপ্তার করা হয়, আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ (৩০), নাসিরুদ্দিন চৌধুরী (২৯), নাজমুল হুদা (২৭), লোকমান গণি (২৯), মোহাম্মাদ করিম (২৭), আব্দুল্লাহ আল মুনিম (২২), কামরুল হাসান রানা (২০), আরিফুল ইসলাম (২০), আজিমুদ্দিন (৩১), মো. আজিমুল হুদা (২৪), ফারহান বিন ফরিদ(২৩) মো. সম্রাট (২২), ওয়ালিদ ইবনে নাজিম (১৮) ও ইমতিয়াজ ইসমাইলকে (২৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল, জিহাদি বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দশজনকে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করছে। এই মামলার ১৮ নম্বর আসামি রিদওয়ান আহমেদ সিয়াম।

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘সিয়ামসহ এজাহারনামীয় সব আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত ছিল। পুলিশি অভিযানে টের পেয়ে সে আত্মগোপন থেকে হয়তো পালিয়েছে। এখন পরিবার নিখোঁজ জিডি করেছে। আর মামলাটি তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম।’

সিয়ামের বাবা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রং নম্বর বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অন্যদিকে চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মহসীন কলেজের একজন ছাত্র নিখোঁজের কথা জানি। এ ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। তবে সে হিযবুতকর্মী কিনা জানা নেই। জিডির তদন্ত চলছে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!