হাসি-কান্না, আড্ডা, উৎসব—মিলেমিশে একাকার

চবি সাংবাদিকতা বিভাগের ২৫ বছর পূর্তি

কেউ বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ মেতে উঠেছেন খুনসুটিতে। আবার কেউ ব্যস্ত সেলফি উৎসবে, কেউবা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভেঙে পড়ছেন কান্নায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২৫ বছর পূর্তিতে রজতজয়ন্তী উৎসবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে তারা এক হয়েছিল সবুজ ক্যাম্পাসে।

পুরোনো বন্ধু-বান্ধবীদের পেয়ে সবার মুখে ঝলমলে হাসি ফুটে ওঠে। তাদের আনন্দ, আড্ডা চিরযৌবনা। ঠিক ১০-১৫ বছর আগে যেমন ক্যাম্পাসে ছিলেন এখনও তেমন। সেই খুনসুটি, ঝুঁপড়িতে বসে একসঙ্গে চা খাওয়া। বয়সের ব্যবধানের বাধাকে পেছনে ফেলে জুনিয়রদের সঙ্গে মেতেছেন সেলফি উৎসবে।

১৯৯৪ সালের যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগটি। আড়াই দশকে এ বিভাগ থেকে পাঠ চুকিয়েছেন ২০টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সবুজ ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তারা। কাজের সূত্রে কেউ চট্টগ্রামে থিতু হয়েছেন, কেউ কেউ গেছেন ঢাকাসহ দূর-দূরান্তে, দেশের বাইরেও গেছেন অনেকেই। কেউ গণমাধ্যমের তুখোড় কর্মী, কেউ প্রশাসনে, কেউ বা করপোরেট অফিসের বড় কর্তা, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কিংবা সমাজকর্মী।

শুধু কি সাবেকরা? উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন বর্তমানরাও। অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বড়দের সঙ্গে মিলিত হতে। বিভাগের প্রতিটি ক্লাসরুম সাজিয়েছেন, বিভাগের দেয়ালে গণমাধ্যম ও যোগাযোগবিষয়ক দেয়ালিকা এঁকেছেন পরম যত্নে। বড়রা যেমন তাদের কাজে খুশি হয়েছেন, তেমনি ছোটরাও পেয়েছেন অনুপ্রেরণা। সাবেকরা বর্তমানদের সঙ্গে তাদের স্মৃতি বিনিময় করেছেন। বর্তমানরা সে দিনগুলোর কথা শুনে আপ্লুত হয়েছেন। বিভাগের শিক্ষকরাও মিলিত হয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। গুরু-শিষ্যের ব্যবধান ভুলে একসঙ্গে নেচেছেন ও গেয়েছেন।

১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ছিল অনুষ্ঠানের প্রথম দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথির ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে শুরু হয় রজতজয়ন্তীর দ্বিতীয় দিনের উৎসব। বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও বিভাগের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এদিন স্মৃতিচারণ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিমুল নজরুল ও সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্লাহ।

হাসি-কান্না, আড্ডা, উৎসব—মিলেমিশে একাকার 1

রজতজয়ন্তী উৎসবে ফিনল্যান্ড থেকে ছুটে আসেন প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ফিনল্যান্ডের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ফিনল্যান্ডের সম্পাদক অফিউল হাসনাত রুহিন। ১৯৯৬ সালে দ্য ডেইলি স্টারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। অনেক বছর পরে বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত।

তিনি বলেন, ‘শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কনসার্ট করতে পারতো না কেউ। কিন্তু আমরা দ্বিতীয় ব্যাচের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সেটা করে দেখিয়েছি। সে সময় অন্যরকম আনন্দ পেয়েছিলাম। ক্যাম্পাস জীবন মনে রাখার মতো একটা দিন ছিল।’

আমেরিকা থেকে আসা দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা মাহাবুব ফারহানাজ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছি। এর মধ্যে অনেক সময় চলে গেছে। চাইলেও আসা সম্ভব হয়নি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে, নিজের বিভাগে। তবে নিজ বিভাগের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে সত্যি খুব ভালো লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে আমরা ঝুঁপড়ি পার্টি ছিলাম। আমরা ঝুপড়িতে বসে আড্ডা দিতাম। শিক্ষকরা সেখান থেকে ধরে এনে ক্লাস করাতেন। অনেক সময় শিক্ষকরা আমাদের সাথে ঝুঁপড়িতে বসে ক্লাস করাতেন।’

২৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক মুক্তাদির বলেন, এমন আয়োজন পাবো সেটা ভাবতেও পারিনি। বিভাগের প্রথশ ব্যাচ থেকে শুরু করে ২৫ তম ব্যাচের সবাইকে একসঙ্গে পেয়েছি। আজকে অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষকে দেখেছি, যারা আমাদের এ বিভাগ থেকেই পড়ালেখা করেছে। আমরা তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

অনুষ্ঠানে আরও স্মৃতিচারণ করেন দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সরওয়ার সুমন, মাছরাঙা টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান তাজুল ইসলাম, তারেক মাহমুদ, ডেইলি সানের ব্যুরো প্রধান নুর উদ্দিন আলমগীর মিলন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ডা. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!