হাসপাতালে সিট সংকট, চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর ভিড়

দ্বিতীয় দফায় করোনা শনাক্তের উর্ধ্বগতির সাথে সাথে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে আবারও সিট সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে আবারও চট্টগ্রামের হাসপাতাল, ক্লিনিকে বাড়ছে করেনা রোগীর ভিড়। গত ১ মাসে যত করোনা রোগী ছিল সর্বশেষ ১৫ দিনের হিসেবে তার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। এরই মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে খালি নেই আইসিইউ বেড।

করোনার উর্ধ্বগতির সাথে তাল মিলিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৫৯ জন। এদের মধ্যে ১৫১ জন নগরের এবং ৮ জন বিভিন্ন উপজেলার। তাতে করে করোনার শুরুর দিকে হাসপাতালে সিট না পেয়ে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয় জনমনে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, নগরীরর বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত কোন কেবিন ফাঁকা থাকছে না। ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) তেও ফাঁকা থাকছে না কোন সিট।

নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য সাধারণ কেবিন আছে ৩৭টি। গত মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) করোনা রোগী ভর্তি ছিল ৩৭টি কেবিনের সবকটিতে। তাদের ৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ৭ জন। পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তালুকদার জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌’এখন কোন সিটই ফাঁকা থাকছে না। করোনা রোগীর ভর্তি গত সপ্তাহের চেয়ে দ্বিগুণ।’

মেট্রোপলিটন হাসপাতালের হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে কোভিড রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত ২৮টি সিটের বিপরিতে রোগী ভর্তি আছে ২৮ জন। আইসিইউ বেড রয়েছে ৫টি। এর বিপরিতে রোগী ভর্তি রয়েছে ২ জন।’ তিনিও জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

ন্যাশনাল হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত সিট ১৮টি। ভর্তি আছে ১৮ জনই। এইচডিইউতে (হাই ডিপেনসিভ ইউনিট) ৫ জন। আইসিইউ বেড রয়েছে ৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৫ জন। ন্যাশনালের কাস্টমার সার্ভিস অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রোগী ভর্তি বেড়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। হাসপাতালের গত ১৫ দিনের তথ্য দেখলেই বোঝা যায়, করোনা রোগী বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই বলছেন, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ভ্রমণ থেকে তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। রোগীদের অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকছে বলে জানান শাহাদাত হোসেন।’

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছে ৪৪ জন। আইসিইউতে রোগী আছে ৯ জন। বেড রয়েছে ১০টি। বিআইটিআইডিতে রোগী ভর্তি আছে ৭ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ৬৮ জন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১ মাসে করোনা রোগী ভর্তির হার যেমন ছিল ১৫দিনে সে সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারে অসতর্কতা, বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, পাবলিক জমায়েতের জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ নানা কারন রয়েছে করোনা বৃদ্ধির কারন। তাই এ সময় আরো সতর্ক হতে হবে সবাইকে। আবারও যে একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে আমরা এগুচ্ছি, তা বলার অবকাশ রাখে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের এ সময় মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন মানুষের ভাইরাল ফেভারসহ অন্য রোগগুলো শরীরে সক্রিয় হয়ে উঠে।’ তিনি মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে পরামর্শ দেন, সেই সাথে লোকসমাগম স্থান এড়িয়ে থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তিনি করোনা নিয়ে সাধারন মানুষের ভীতি কমে যাওয়াও করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়ার কারন বলে জানান।

আইএমই/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!