হালিশহর-কোতোয়ালীতে করোনার মৃত্যু বাড়ছেই, হাটহাজারী-সীতাকুণ্ড আরও মৃত্যুপ্রবণ

চট্টগ্রামে ১৬ মাসে মারা গেলেন ৮২৪ জন, এর ৪৫৭ জনই ষাটোর্ধ

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আটশোর ঘর ছাড়িয়ে গেছে আগেই। সুনির্দিষ্ট করে বললে শনিবারে (১৭ জুলাই) এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৮২৪-এ। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই মারা গেলেন ৭৯ জন— যার ৫০ জনই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাসে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫১৫ জন ও ১৪ উপজেলার ৩০৯ মিলিয়ে মানুষ মারা গেছেন মোট ৮২৪ জন।

সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবমতে, চট্টগ্রাম নগরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব এলাকার লোক বেশি মারা যাচ্ছে, তার মধ্যে হালিশহর রয়েছে সবচেয়ে এগিয়ে। তার ঠিক পরেই আছে কোতোয়ালী এলাকা। মৃতের সংখ্যায় এর পিছু পিছু আছে পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, চকবাজার, খুলশী, বন্দর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং এলাকা। দামপাড়া, বায়েজিদ ও আগ্রাবাদেও মৃতের সংখ্যা কম নয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে করোনায় ভুগে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছেন হাটহাজারীতে। এরপরই মৃত্যুপ্রবণ উপজেলার মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী, ফটিকছড়ি ও মিরসরাই।

চট্টগ্রাম নগরীতে যেসব এলাকার লোক বেশি মারা যাচ্ছে

গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৮ জন মানুষ মারা গেছেন হালিশহরে। ৪৯ জনের মৃত্যু নিয়ে এরপরই আছে কোতোয়ালী এলাকা। এই ১৬ মাসে করোনায় ভুগে পাঁচলাইশে মারা গেছেন ৩৭ জন, চান্দগাঁওয়ে ৩৭ জন, চকবাজারে ২৯ জন, খুলশীতে ২৫ জন, পাহাড়তলীতে ২৪ জন।

এছাড়া একই সময়ে বন্দরে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের, ডবলমুরিংয়ে ২০ জন, দামপাড়ায় ১৯ জন, বায়েজিদে ১৮ জন, আগ্রাবাদে ১৮ জন, আকবরশাহ এলাকায় ১৫ জন, পতেঙ্গায় ১৫ জন এবং বাকলিয়ায় ১০ জন।

অন্যদিকে কর্ণফুলী এলাকায় মারা গেছেন ৬ জন, মাদারবাড়িতে ৬ জন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ৫ জন, লালখানবাজার, কাট্টলী ও রাহাত্তারপুলে মারা গেছেন ৪ জন করে, ঈদগা, মোহরা, ফিরোজশাহ কলোনি, আসকারদিঘির পাড়, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, হাজারী লেইন ও এনায়েতবাজারে মারা গেছেন ৩ জন করে। এছাড়া ইপিজেড এলাকা, কাজীর দেউড়ি এলাকা, মনসুরাবাদ, দেওয়ানহাট, রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা, কাতালগঞ্জ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা ও দেওয়ানবাজারে মারা গেছেন দুজন করে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন করে লোকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে নগরীর কদমতলী, বড়পোল, হিলভিউ, চন্দনপুরা, দেওয়ানহাট, ব্যাটারি গলি, কালুরঘাট, আনন্দপুর, মোহাম্মদপুর, বিশ্বকলোনী, বউবাজার, মোগলটুলী, মুরাদপুর, লেভেলপার্ক এলাকায়।

চট্টগ্রাম নগরীতে এসব এলাকার বাইরে অন্যান্য এলাকায় মারা গেছেন আরও ১৭ জন।

চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় যেখানে লোক মারা যাচ্ছে বেশি

গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাসে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৩০৭ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৪ জন মানুষ মারা গেছেন হাটহাজারীতে। ৪৩ জনের মৃত্যু নিয়ে এরপরই আছে সীতাকুণ্ড। একই সময়ে করোনার কবলে পড়ে বোয়ালখালী, ফটিকছড়ি ও মিরসরাইয়ে ২৪ জন করে লোক মারা গেছেন। রাউজানে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।

অন্যদিকে পটিয়ায় মারা গেছেন ২২ জন, সাতকানিয়ায় ২০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৮ জন, লোহাগাড়ায় ১০ জন, আনোয়ারায় ১০ জন, চন্দনাইশে ৯ জন, বাঁশখালীতে ৯ জন এবং সন্দ্বীপে সর্বনিম্ন ৭ জন।

চট্টগ্রামে যে বয়সী লোক মারা যাচ্ছেন করোনায়

বয়স অনুসারে গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাসে শূন্য থেকে ১০ বছরের শিশু মারা গেছে ৪ জন— এর মধ্যে ছেলে ৩ জন এবং মেয়ে ১ জন। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৭ জন— এর মধ্যে পুরুষ ১ জন এবং বাকি ৬ জনই মহিলা। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ১৬ জন— এর মধ্যে পুরুষ ৬ জন এবং মহিলা ১০ জন। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৩৮ জন— এর মধ্যে পুরুষ ১৫ জন এবং মহিলা ২৩ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ১০৫ জন— এর মধ্যে পুরুষ ৬৪ জন এবং মহিলা ৪১ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষ মারা গেছেন ১৯২ জন— এর মধ্যে পুরুষ ১১৮ জন এবং মহিলা ৭৪ জন। ৬১ থেকে এর উর্ধ্বে মানুষ মারা গেছেন ৪৫৭ জন— এর মধ্যে পুরুষ ৩৩৪ জন এবং মহিলা ১২৩ জন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!