হালিশহরে স্ত্রী হত্যার রহস্য উঠে এলো পিবিআইয়ের তদন্তে

হালিশহরে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আদালতে অভিযোগ পত্র দেয়া হয়েছে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় এই হত্যা মামলার অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

নিহত নারীর স্বামী মো. খালেদ নূরকে হত্যায় একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

মামলার তদন্ত শেষে এসব তথ্য জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

উল্লেখ্য, ১৮ মার্চ নগরের হালিশহর আবাসিক এলাকায় লাকি আক্তার (৩৬) নামের এক নারীকে হত্যা করা হয়।

প্রসংগত, হত্যাকাণ্ডের পর সিএমপির হালিশহর থানার পুলিশের তদন্তে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় দেড় মাসের মধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২৪ এপ্রিল মামলার তদন্ত ভার চলে যায় পিবিআইয়ের হাতে। দায়িত্ব গ্রহণের পরের দিন প্রযুক্তির সহয়াতায় মামলার অভিযুক্ত মো. খালেদ নুরকে (২৬) কক্সবাজারের হলিডে মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পিবিআই। অভিযুক্ত খালেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

পিবিআইয়ের কাছে খালেদ হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘লাকির সাথে আমার বিয়ে হয় ৪ বছর আগে। আমাদের সংসারে ২ সন্তান ছিল। লাকি আর আমি মিলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালু করি। আমাদের অবস্থা আস্তে আস্তে ভালও হয়। তবে লাকি আমাকে সবসময় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত। আমাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিত না। আমি কারও সাথে কথা বলি সেটাও চেক করত। আমি দাড়ি, চুল কিভাবে রাখব, কোন কাজ করব সব ঠিক করে দিত সে। আমাকে সে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতে যেতে দেয়নি সে। আমাকে সে বাড়িতেও যেতে দিতো না। সে আমাকে সামান্যতেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। এক পর্যায়ে আমার পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। তার উপর লাকির গালিগালাজ সহ্য করার মত ছিলো না।’

খালেদ আরোও জানায়, ‘ঘটনার দিন সে আমার খাবার ফেলে দেয়। আর আমাকে গাছের বাটাম দিয়ে মারধর করেলে এক পর্যায়ে আমি তাকে মসলা বাটার লোহার পাত্র (হামানদিস্তা) দিয়ে আঘাত করি। আমি বুঝে উঠার আগেই লাকির মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর আমিও আত্মহত্যার চেষ্টা করি। আর লাকির ছোট ভাইকে কল করে সব বলি। আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় রাতের আঁধারে আমি লাকির কবর জিয়ারত করতে যাই। ঘটনার পর কয়েকদিন ঢাকায় থেকে আমি শহরের সব ব্যবসা ছেড়ে কক্সবাজারে নিজের বাড়িতে চলে যাই।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘লাকি আক্তারের আগেও এক শ্রীলংকান নাগরিকের সাথে সংসার হয়েছিল। সে সংসারে দুইটি ছেলেও ছিল। খালেদের সাথে সম্পর্কের পর এক মেয়ে আর এক ছেলে হলেও শ্রীলংঙ্কান নাগরিকের দাবি এরাও তার সন্তান। খালেদের সাথে লাকি আক্তারের বিয়ে হওয়ার বিষয়ে খালেদের পরিবার জানে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রটি বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছি।’

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!