হালিশহরে গৃহকর্মী পুড়ে গেল কাউন্সিলরের বাবার বাড়িতে

চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে রেনু বেগম নামের এক গৃহপরিচারিকা দগ্ধ হয়েছেন। তার শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকালে হালিশহর ৩ নম্বর রোডের ২ নম্বর লেনের ‘বি’ ব্লকের ২৭ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ওই বাড়িতে থাকতেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি একেএম বেলায়েত হোসেন। তিনি মহিলা কাউন্সিলর হুরে আরা বেগম বিউটির বাবা। বিউটিও থাকতেন ওই ভবনের চারতলায়।

জানা গেছে, প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় কাজে গিয়েছিলেন রেনু। রুটি বানানোর জন্য পানি চুলায় দিয়ে গ্যাস জ্বালাতেই রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়। এ সময় অগ্নিদগ্ধ হন রেনু। তার চিৎকার শুনে কাউন্সিলর বিউটসহ পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এসে পানি দিয়ে আগুন নেভান। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনলে ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আগুনে রেনুর শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

রেনু জানান, তার স্বামী কয়েক বছর আগে তাকে ছেড়ে গ্রামে গিয়ে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তার খোঁজ নেন না। তিনি বেলায়েত হোসেনের বাসাসহ আরো তিন বাসায় কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এসে রুটি বানানোর জন্য পানি বসিয়ে গ্যাসের চুলা জ্বালাতেই পুরো রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়। এতে তার গায়ে আগুন লাগলে চিৎকার করে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে কাউন্সিলর বিউটিসহ পরিবারের সদস্যরা এসে পানি দিয়ে তার গায়ের আগুন নেভান।

রেনু আরও জানান, প্রায় দেড় বছর বেশি সময় ধরে তিনি কাজ করছেন ওই ঘরে। কোনোদিন চুলার আগুন জ্বালাতে সমস্যা হয়নি।

গৃহকর্তা একেএম বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি বাসায় একা থাকি। রেনুকে আমি নিজের মেয়ের মতো দেখি। সে দুপুরে আমাকে রান্না ও ঘরের কাজ করে টেবিলে খাবার রেখে চলে যায়। আমার রান্নাঘরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এই ভবনের চারতলায় আমার মেয়ে কাউন্সিলর বিউটিও থাকে। চুলা যদি আমরা কেউ রাতে জ্বালিয়ে রাখতাম, তাহলে সারারাত গ্যাস বের হলে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটত। আগুন শুধু রান্নাঘরেই লেগেছে। এমনকি রান্নাঘরের পুরোটা ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি। আমি ধারণা করছি চুলা প্রথমে না জ্বললে বার বার চেষ্টা করার সময় গ্যাস বের হয়ে যায়, এতে আগুন ধরে রেনু দগ্ধ হয়েছে।’

এদিকে রেনু যেন ঘটনাটি মিডিয়াকে না জানায় সেজন্য চাপ দেওয়া হয়। এমনকি জানালে তাকে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে দেবেন না—এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বেলায়েত হোসেনের পরিবারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এটি আমি কেন বলতে যাব? আমি ও আমার মেয়ে কয়েকবার রেনুকে দেখতে হাসপাতালে গেছি। প্রায় ৩০ হাজার টাকার খরচও হয়ে গেছে। আর মিডিয়া কী লিখবে তা আমার জানা। তাই আমি নিষেধ করব কেন?’

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জনি বলেন, ‘রেনুর শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হতে তার সময় লাগবে।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!