হালিশহরের রাস্তায় কোপার শোধ নিল ব্রাজিল, লকডাউনের ম্যাচে আর্জেন্টিনার হার

চট্টগ্রামে লকডাউনের প্রথম দিন

কঠোরতম লকডাউনে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের ব্যস্ত সড়ক হয়ে উঠলো রীতিমতো খেলার মাঠ। তাও যে সে দল নয়, পিচঢালা সেই মাঠে খেললো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা জিতলেও তারা হেরে গেল হালিশহরে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে দুই গোলে জিতলো ব্রাজিল। চট্টগ্রামের নেইমার-মেসিরা পুরস্কার হিসেবে পেলেন চকলেট-চুইংগাম।

শুনতে একটু অবাক লাগলেও চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ ব্যস্ততম সড়ক এখন রীতিমতো ফুটবল-ক্রিকেটের মাঠ। পিচঢালা সেই ব্যস্ত সড়কে এখন গাড়ির চাইতে মানুষের সংখ্যাই বেশি। লকডাউনে যখন ব্যস্ত সড়কগুলো বেকার সময় কাটাচ্ছে, তখনই পাড়া মহল্লার ছেলেদের ফুটবল-ক্রিকেটে তুমুল ব্যস্ত সড়কগুলো।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) লকডাউনের প্রথম দিনে এমন চিত্র চোখে পড়লো নগরীর বিভিন্ন স্থানে।

নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়কগুলোর একটি হালিশহর এক্সেস রোড। সচরাচর প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করলেও লকডাউনের কারণে সেই সড়কগুলো পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে।

ওই সড়কের ছোটপুল এলাকায় রাস্তার ধারে রয়েছে ১৫টি গাড়ির গ্যারেজ, যাতে কাজ করে অন্তত ৩৫-৪০ জন কিশোর। কঠোর লকডাউনে যখন দোকান খোলার সুযোগ নেই, তখন নিজেরা নিজেরাই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলে ভাগ হয়ে শুরু করে দিল ফুটবল ম্যাচ। সেই ম্যাচের দর্শক হয়েছেন গ্যারেজগুলোর মালিক মিস্ত্রিসহ বেকার রিক্সাচালকরা। সেই সঙ্গে পথচারীরা তো ছিলেনই।

সেই দর্শকদের পক্ষ থেকে নেইমার-মেসিদের চকলেট ও চুইংগাম দিয়ে উৎসাহিত করা হয়।

আর লকডাউনে বদলে যাওয়া এমন চিত্র শুধু হালিশহরেই নয়, ‘কঠোরতম’ লকডাউনের নগরীর প্রতিটি সড়ক ও উপ-সড়কে চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য।

রিয়াদ, মিজান,শাহাদতরা কাজ করেন রাহাত্তারপুল ডেপুটি রোডের একটি ওর্য়াকশপে। প্রত্যেকের বয়স ১২ বছরের নিচে। লকডাউনে যখন দোকান বন্ধ, সেই সুযোগে এলাকার আরও দু চারজন সমবয়সীকে নিয়ে শুরু করেছে মার্বেল ও লাঠিম খেলা। সকাল থেকে শুরু হয়ে রিয়াদদের সেই খেলা চলে দুপুরের আগ পর্যন্ত। তড়িঘড়ি করে খেয়ে আবারও শুরু হয় খেলা— যা চলে গ্যারেজ মালিকের দৌড়ানি খাওয়ার আগ পর্যন্ত।

মার্বেল খেলোয়ার মিজান জানালো, ‘দোকান খোলা থাকলে সারাদিন কাজ করতে হয়। খেলতে পারি না। এখন সরকার লকডাউন দিছে, তাই মন ভরে খেলে নিচ্ছি।’

কথা বলতে বলতেই গ্যারেজ মালিকের দৌড়ানি খেয়ে পালাতে বাধ্য হয় মিজান ও তার দল।

ছোটরা যখন ফুটবল-ক্রিকেট নিয়ে সড়ক দখল করে রেখেছে, তখন বড়রাও বসে নেই। বাসচালক করিম মিয়া কাজ নেই লকডাউনে। পাড়ার আরও তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে বড় মিয়া মসজিদের খালপাড় এলাকায় তিনি বসিয়েছেন লুডুর বোর্ড। চা-নাস্তার বাজিতে সকাল-বিকাল চলছে এই লুডুর আসর। করিম মিয়ার মতো আরও ৬টি গ্রুপ নিজেদের মত করে কাটাচ্ছে লকডাউনের অলস সময়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!