হালদায় নৌকাগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে, মা মাছও বৃষ্টির অপেক্ষায়

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় মা মাছের আনাগোনা বাড়ায় নদীর দুই পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। সামনে অমাবস্যা তিথি। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বাড়বে। তখন ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। ইতোমধ্যে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। ডিম সংগ্রহকারীরা কুয়া তৈরি করে এখন ডিম সংগ্রহের জন্য নৌকা নিয়ে প্রস্তুত। কেবল ভারি বর্ষণ হলেই ডিম উৎসবে মেতে উঠবে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।

জানা গেছে, প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা পাড়ে মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসব লেগে যায়। এ সময়টাতে ডিম সংগ্রহকরীরদের ব্যস্ততার শেষ থাকে না। তবে এ বছর লকডাউনের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সব ধরনের কলকারখানা বন্ধ হালদায় দূষণ কম হয়েছে। ফলে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহের রেকর্ডের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হালদায় নৌকাগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে, মা মাছও বৃষ্টির অপেক্ষায় 1

শুক্রবার (৭ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজিমের ঘোনা অংকুরি ঘোনা, রামদাস মুন্সির হাট, মাদার্শা সাত্তারঘাট, মাছুয়া ঘোনা, কাগতিয়া, গড়দুয়ারা এলাকায় নৌকা, জালসহ ডিম আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত শত শত ডিম সংগ্রহকারী।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও ১৩ মে দিকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে ভারি বর্ষণের জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে ডিম সংগ্রহকারীদের।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মা মাছের ডিম সংগ্রহের পর রেণু ফোটানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাটহাজারী উপজেলার শাহমাদারি, গড়দুয়ারা ও রাউজান অংশের মুবারকখীল ও পশ্চিম গহিরায় মোট ৫টি সরকারি হ্যাচারি ও ১৬৭টি কুয়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়রা আরও শতাধিক কুয়া তৈরি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ডিম সংগ্রহ ও রেণু ফোটানো, বিক্রিসহ সব বিষয়ে সহায়তা করে থাকে।

সরকারি তথ্য মতে, ২০২৯ সালের ১৫ মে ডিম ছাড়ে হালদায় মা মাছ। আহরণ করা প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে ২০০ কেজির বেশি রেণু উৎপাদিত হয়েছিল। তবে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম আহরণের আশা করছে স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী, প্রশাসন ও হালদা গবেষণা সেন্টার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। পূর্ণিমার জো চলছে। ভারি বৃষ্টি হলে এক সপ্তাহের মধ্যে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। লকডাউনে কলকারখানা বন্ধ থাকায় দূষণ অনেকটা কমে গেছে। ফলে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহের আশা করছি।’

সিএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!