হালদায় ডিম সংগ্রহের আড়ালে তৎপর মা মাছ শিকারিরা

এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় (২২ মে) হয়ে গেল ডিম সংগ্রহের উৎসব। রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ ও রেণু ফোটানোর উৎসবের আড়ালে ঢাকা পড়েছে মা-মাছের নিরাপত্তা । এই সুযোগে মা-মাছ শিকারে মেতে উঠেছে হালদা পাড়ের জেলেরা। বিশাল হালদার বিভিন্ন অরক্ষিত পয়েন্টে শিকার ঝুঁকিতে মা-মাছ।

জানা গেছে, এ বছর রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশসহ কার্প জাতীয় মাছ মার্চের শুরু থেকে ডিম ছাড়ার জন্য হালদায় আসতে শুরু করে। ডিম ছাড়তে আসা ও ডিম ছাড়ার পরবর্তী দশ দিন (মার্চ -মে) সময় মা- মাছের নিরাপত্তা জরুরি।

২২ মে হালদার ১২ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে। ডিম সংগ্রহ ও রেণু ফোঁটানোর কাজে যখন ব্যস্ত তখন হালদায় উৎপেতে থাকে মা-মাছ শিকারিরা। মাছ ডিম ছাড়ার পর স্বাভাবিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে মা-মাছ। দূর্বল মাছগুলো নদীর গভীর জলে বা কুমে ফিরে যাবার সময় শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে। হালদার বিশাল বুকজুড়ে কোনও ধরনের টহলের ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে মা-মাছ। প্রতি বছর ডিম ছাড়তে আসার পর ও ডিম ছেড়ে চলে যাওয়ার পথে দূর্বল অবস্থায় অনেক মা-মাছ শিকারিদের হাতে মারা পড়ে। অনেক জায়গায় শিকারিরা চুপিসারে মা মাছ ধরে তা বিক্রি কিংবা রান্না করে খেয়ে ফেলে। হালদা পাড়ের মানুষদের কাছে মা-মাছের স্বাদের কারণে বিশেষ কদর থাকায় শিকারিদের মা-মাছ ধরার তৎপর বেশি।

তবে হাটহাজারী অংশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন ডিম ছাড়ার আগে ও পরে দূর্বল মা-মাছ শিকার রোধে তৎপর ছিলেন। হাটহাজারীর কিছু অংশ ছাড়া বাকি বিশাল হালদার বুকে মা-মাছ রয়ে গেল শিকার ঝুঁকিতে।

হালদা বিশেষজ্ঞ, ডিম সংগ্রহকারীদের মতে, হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার আগে ও পরে শিকার রোধে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা উচিত। নতুবা দিন দিন মা মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।

জানা যায়, মোহরা, মদুনাঘাট ব্রিজ, রামদাস মুন্সির হাট, নাপিতের ঘোনা, আমতোয়া, আজিমের ঘোনা, সাত্তার খালের মুখ, গড়দুয়ারা এলাকার কোনও কোনও স্থানে একাধিক জেলে পাড়া থাকায় মা-মাছ শিকারের প্রবণতা বেশি। এসব এলাকার জেলেরা ঘের জাল, বিষ প্রয়োগসহ নানা পদ্ধতিতে মা-মাছ শিকার করে। সর্বশেষ মা-মাছ ডিম ছাড়তে ঘোনায় আসার সময় (৯ মে) সাত্তারঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে ১৪ কেজি ওজনের মা-মাছ গুরুতর আহত অবস্থায় ভাসতে দেখে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। উদ্ধারের পর মা-মাছটিকে চিকিৎসার জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আইডিএফের হস্তান্তরের ২৪ ঘন্টা পর সেটি মারা যায়।

হালদা রিভার রিচার্স সেন্টারের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় মা-মাছ ডিম ছাড়তে আসার ও আবার ডিম ছেড়ে কুমে ফিরে যাওয়ার সময় খুবই দূর্বল থাকে। এ সময় শিকারিরা মা- মাছ শিকারে তৎপর হয়ে উঠে। প্রজননকালীন সময়ে মা-মাছের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা মনি বলেন, ডিম ছাড়ার পর দূর্বল মা-মাছের নিরাপত্তায় আমরা নজরদারি করছি। হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও নিয়মিত তদারকি করছেন। হালদার মা-মাছ রক্ষায় হালদা পাড়ের লোকজনসহ প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি।

সিএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!