হালদায় আবারও আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে নমুনা ডিম, জোয়ারের অপেক্ষা

দেশের একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় আবারও উৎসব নেমেছে। আবারও নদীতে নৌকা ভাসিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা। কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও মেঘলা আকাশের কারণে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে৷ এতে আশায় বুক বেঁধেছেন ডিম আহরণকারীরা।

ডিম সংগ্রহকারীদের আশা, এবার হয়তো মিলবে আশানুরূপ ডিম। বুধবার (২ জুন) সকাল থেকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদার বিভিন্ন স্থানে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) মধ্যরাতে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। রাতভর মা মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছাড়লেও দিনে তা কমে আসে। প্রায় ৩০০ নৌকা ও ১ হাজারের বেশি ডিম আহরণকারী মিলে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কেজি মত ডিম সংগ্রহ করেন। যা বিগত কয়েকবছরের মধ্যে সবচে কম। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন ডিম সংগ্রহকারীরা।

এছাড়া হ্যাচারি অব্যবস্থাপনার কারণে সংগ্রহ করা অধিকাংশ ডিম নষ্ট হয়ে যায়। গত দুদিন ধরে অতিবৃষ্টি ও হালদায় পাহাড়ি ঢল নামায় হালদার বিভিন্নস্থানে বেড়েছে মা মাছের আনাগোনা। এতে আবারও নদীতে নৌকা ভাসান ডিম আহরণকারীরা।

বুধবার সকাল থেকে আজিমের ঘাট, নাপিতের ঘোনা মাছুয়া ঘোনা, নয়াহাট, কাগতিয়া, উত্তর মাদার্শা’সহ বিভিন্নস্থানে মাছের আনাগোনা বাড়ায় শতাধিক ডিম আহরণকারী নৌকা নিয়ে ডিমের অপেক্ষা করতে থাকেন। অনেকে নমুনা ডিমও সংগ্রহ করেছেন।

মা মাছের নমুনা ডিম ছাড়ায় বিকেল ৫টার জোয়ারের পর ডিম ছাড়ার আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তাই অনেকে বিকেল ৫টায় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছেন। নদীতে জোয়ার নামলেই নৌকা নিয়ে নেমে পরবেন। এজন্য নৌকা ও ডিম আহরণ সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন।

জোয়ারে মা মাছের আশানুরূপ ডিম ছাড়ার আশার কথা জানান ৫০ বছর ধরে ডিম সংগ্রহকারী মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামায় হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। অনেকে নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ নেমে পড়েছে। কেউ কেউ নমুনা ডিম পাওয়ার কথাও বলছেন। তবে আমি ৫টার জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছি। জোয়ারে যদি মা মাছ ডিম ছাড়ে তখন নৌকা ভাসাব। জোয়ার না হওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়লেও সেটি পরিমাণে সামান্য হবে।

এ ব্যাপারে নদী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য অতি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়। হালদার পানি প্রতিবেশের ভৌত-রাসায়নিক বিভিন্ন মানদণ্ড এবং প্রতিবেশ পরিবেশের প্রাকৃতিক অবস্থার দ্বারা মাছের ডিম ছাড়া, ডিম প্রাপ্তি প্রভাবিত হয়। এবার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃষ্টি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘উজানে বৃষ্টির স্বাদু পানির প্রবাহের স্রোত, মেঘের কাঙ্ক্ষিত গর্জন, বাতাসের ঝাপটা প্রবাহ, পানির স্রোত এবং ঘূর্ণি, কার্প মাছের ডিম ছাড়তে প্রভাবিত করে। পানির বিওডি, পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন, খরতা, অম্লতা, পিএইচ, টারবিডিটি, বাতাস ও তাপমাত্রা এবং বাতাসের প্রবাহ, অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রাকৃতিক প্রভাব, জোয়ার-ভাটার মিথস্ক্রিয়া, পানিতে দ্রবীভূত রাসায়নিক বিভিন্ন পদার্থের অতি অনুকূল অবস্থা- সবকিছু অতি অনুকূল থাকলে মাছ ডিম ছাড়ে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘গত দুইদিনের বৃষ্টিতে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। বিভিন্নস্থানে মা মাছের আনাগোনাও বেড়েছে। ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছে। অনেকে নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। তারা ডিম সংগ্রহের আশা করছেন। উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। আমি ইতিমধ্যে হালদায় সরেজমিনে তদারকি করছি৷’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!