ভিডিও/ হালদার বড় হুমকি এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য

ছুটির সুযোগে প্রাণঘাতি বর্জ্য ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা

মাছ জীবন বাঁচানোর জন্য ডাঙা থেকে পানিতে পড়ে। কিন্তু এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদায় পড়ার পর মাছ বাঁচার জন্য পানি থেকে ডাঙায় উঠে আসে! শিল্প ও আবাসিক বর্জ্য দূষণের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের একমাত্র সংরক্ষিত প্রাকৃতিক মাছ প্রজননকেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। যার ভয়াবহতায় ‘হালদার ক্যান্সার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ান পেপার মিলস। গত ১২ বছর ধরে নিরবে এভাবে দূষিত হচ্ছে হালদা। জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

এশিয়ান পেপার মিলসের স্বত্ত্বাধিকারী বিজিএমইর প্রথম সহ সভাপতি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার ও এফবিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম। গত মার্চে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

দূষণের শিকার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নন্দীরহাট এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ক্ষোভে তারা শুরুতে কথাই বলতে চাননি। কেউ কেউ প্রতিবেদকদের ‘পেপার মিলের দালাল’ বলেও কটাক্ষ করেন। এলাকার বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে দেখে আসছি এই খাল। এই রাক্ষুসী মিলের ময়লা জমে খাল আর খালের চেহারায় নেই। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, এতো গন্ধ!’ তার কথায় সায় দিয়ে আরেক বাসিন্দা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘৫ বছর ধইরাই খালি শুনি এই হচ্ছে সেই হচ্ছে! কী আর লেখেন আপনারা সে তো বোঝাই যায়। মেইন লোকই সমস্যা। সমাধান হবে কই থাইকা?’

রোববার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে এশিয়ান পেপার মিলের ছাড়া ময়লা পানির নমুনা নিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন। এশিয়ান পেপার মিল যে রাতের আঁধারেই ময়লা পানি ছেড়ে দেয় হালদায়—এর স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে ইউএনওর সরেজমিন পরিদর্শনে। দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখেই মানুষের ব্যস্ততার সুযোগে পানি ছেড়ে দিয়েছে এশিয়ান পেপার মিল। সংগৃহীত নমুনা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে বলে জানান মো. রুহুল আমিন।

১১ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন—

রাত ১০.৩০ মিনিটে খবর পেলাম এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্যমিশ্রিত পানি নিকটবর্তী ছড়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে যার শেষ গন্তব্য হালদা নদী। ঘটনাস্থলে গিয়েই দুই বোতল ভর্তি করে নমুনা নিয়ে ফেললাম—পরে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হবে এই ভেবে। এরপরে ঢুকলাম কারখানায়। নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলাম বর্জ্য খালে ফেললেন কেন? তাদের সাফ উত্তর তারা ফেলেনি। পরে ঘুরেঘুরে দেখলাম তারা তাদের বর্জ্য দেশীয় পদ্ধতিতে কাদা/বালুর বস্তা দিয়ে একটা জলাধারের মত তৈরি করে সেখানে রেখেছিলেন।

সেই জলাধারের এক সাইড নাকি আজ দুপুরে ধ্বসে পড়ে (তাদের দাবী) সব বর্জ্য ছড়ায় পড়েছে। এখানে তাদের করার কিছু নাই,এটা স্রেফ দুর্ঘটনা। তাদের ফের জিজ্ঞেস করলাম, এই ধ্বসে পড়ার খবর আপনারা পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনকে জানান নাই কেন? তারা পরে জানাতেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন। দুপুর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কি পরিমান বর্জ্য তাহলে হালদায় গেলো? সরল অংক কিন্তু। এই বর্জ্য রোধ করা গেল না।

ইটিপি থাকতে কাদা/বালুর বস্তা দিয়ে জলাধার বানাই সেখানে কেন তরল বর্জ্য রাখতে হবে? আর রাখতেই যদি হয় তাহলে সেটা যখন তখন ধ্বসে পড়বে এমন ঠুনকো করে কেন বানানো হয়?

একই অপরাধে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে এশিয়ান পেপার মিলের বেলায় কাদা/বালুর জলাধারের মত দুর্বল ব্যবস্থা কেন?

হালদা দূষণের চিত্র সরেজমিনে

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এশিয়ান পেপার মিলের পাশে বাইপাস লাইন ধরে বর্জ্য মরাছড়া খাল ধরে একুতি খালে মেশে। হালদার সঙ্গে সংযুক্ত কাটাখালি, খন্দকিয়া, বাথুয়া, শাহ মাদারি ও কৃষ্ণখালী খাল ধরে বিষাক্ত বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য মরাছড়া, একুতি খাল হয়ে শাহ মাদারি খাল বেয়ে হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট এলাকায় সরাসরি তিনটি জয়েন্ট হয়ে হালদায় মিশছে। আবার হাটহাজারী সদরের হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের বর্জ্য চেঙখালি খাল হয়ে নদীতে মিশছে। গত ১৭ জুলাই বৃষ্টির আড়ালে তরল বর্জ্য ফেলে হালদা নদীর পানি দূষণের অপরাধে ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টকে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ও অয়েল ওয়াটার সেপারেটর স্থাপন না করা পর্যন্ত তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। একইসঙ্গে শুনানি শেষে ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। এদিকে মদিনা ট্যানারি, রওশন ট্যানারি ও রিফ লেদার নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য কৃষ্ণখালি ও খন্দকিয়া খাল হয়ে নগরীর প্রান্তে মদুনাঘাট এলাকায় গিয়ে হালদা নদীতে মিশছে।

হালদা নদী সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্যের মাধ্যমে। অভিনব কৌশল অবলম্বন করে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের জমানো বর্জ্য খালে ছেড়ে দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারি বর্ষণের রাতে এশিয়ান পেপার মিল থেকে বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে সংলগ্ন খালের পানি শুরুতে কালচে বর্ণ ও পরে লাল বর্ণ ধারণ করে। এসব ময়লা পচে অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে। তা থেকে উৎকট গন্ধ বের হয় আর এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।

এছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘অনন্যা’ আবাসিক এলাকার কাটা মাটি ও অন্যান্য বর্জ্য প্রকল্পের মূল নালা হয়ে কুয়াইশ, কৃষ্ণ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার ভেতর দিয়ে চলা প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদী নগরীর প্রান্তে মোহরা অংশে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে।

এলাকাবাসীর আক্ষেপ

নন্দীর হাট এলাকার জাকের এন্ড সন্সের স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘৫ বছর ধরে দেখে আসতেছি। এরা যথেষ্ট প্রভাবশালী। আমরা অসহায় তাদের কাছে। যদি আপনারা কিছু করতে পারেন, তাহলে এই মিলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাই আমরা।’

মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘নেহালপুরের ৫০০ একর জমি এখানে ছিল। আমরা চাষবাস করতাম। এই খালগুলোতে কত পানি ছিল। সপ্তাহে মাছ পাইতাম অনেক। কত ঘরের সংসার চলতো এখান থেকে মাছ ধরে আর এখন গন্ধের জন্য বাঁচতে পারি না।’

নন্দীর হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এমরান জানান, ‘টাকা খাইয়া মুখ বন্ধ রাখছে প্রভাবশালী লোকেরা। আমরা খুব অসহায়। বৃষ্টি ছাড়াও দুই তিন দিন পর পর অনেক রাতে হুট করে ময়লা ছেড়ে দেয় আর গন্ধে নাক ডুবিয়ে চলা লাগে।’

এমরানের সাথে কথা বলা অবস্থায় ১০-১২ জনের জটলা তৈরি হলে সবার মুখেই একটাই কথা, ‘কিছু একটা করেন।’ হতাশার সুর তুলে মো. হাসান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই শুধু কাজ করে-করে আমরা খালি মরি আর মরি।’

হালদার পরিণতি হবে বুড়িগঙ্গার মত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক বছরে দূষণের কারণে হালদা নদীর কয়েকটি অংশে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে; বেড়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড—যে পরিস্থিতি মাছসহ জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতিকূল। দূষণের কারণে হালদায় মাছের রেণু উৎপাদন এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে; নদীর বিভিন্ন অংশে মরা মাছ ভাসছে।

হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘দূষণের মাত্রা যে হারে বাড়ছে। শুধু মাছ নয় একসময় হালদাই বিলুপ্তি হয়ে যাবে। এতো মারাত্মক! এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে হালদার পরিণতি বুড়িগঙ্গার মত হবে।’

মনজুরুল কিবরিয়া আরও বলেন, ‘প্রায় ১০-১২ ধরে এ হালদা বাঁচাতে কাজ করে চলছি। এশিয়ান পেপার মিল থেকে কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং কাগজের উচ্ছিষ্ট অংশ খালে ফেলার কারণে সংলগ্ন মরা ছড়া খালটি এখন মৃত প্রায়। এসব আর্বজনা খালে জমে অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়, যা ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়।’

মনজুরুল কিবরিয়া তার এক রিপোর্টে তুলে ধরেন, গত ১৯ জুন ২০১৮ রাত থেকে ২১ জুন পর্যন্ত নদী ব্যাপক দূষণ আগ্রাসনের শিকার হয়। ওই সময়ে নদীর সাত্তার ঘাট থেকে নদীর মদুনাঘাটের ১ কিলোমিটার নিচ পর্যন্ত এলাকা এবং তৎসংলগ্ন অববাহিকার বিলগুলোতে ২২ প্রজাপতি মাছ ব্যাপক হারে মরে ভেসে উঠে। খালের মুখ ও নাপিতের ঘাট এলাকায় হালদার পানির নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। পরীক্ষায় মদুনাঘাট এলাকায় খন্দকিয়া খালের মুখে হালদার সংযোগ পয়েন্টে প্রতি লিটারে এক দশমিক তিন শূন্য মিলিগ্রাম ডিও (দ্রবীভূত অক্সিজেন) পাওয়া গেছে, যেখানে অন্তত প্রতি লিটারে চার দশমিক পাঁচ শূন্য মিলিগ্রাম থাকা প্রয়োজন।

অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘যে মাত্রার ডিও সেখানে পাওয়া গেছে তাতে কোনো মাছ বাঁচার কথা না। রাবার ড্যামের কারণে নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং নির্বিচারে মা মাছ নিধন চলছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে দূষণ। গত এক দশকে রেণু উৎপাদন তাই সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিব মহোদয় আমাকে ফোন করেছিলেন। এশিয়ান পেপার মিলের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। কিছুদিন আগে বিষয়টির দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। এরপর আমরা ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি। পরীক্ষাগারে সেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিওডি, সিওডিসহ বেশিরভাগ মানমাত্রাই নেতিবাচক। পরিদর্শক দল পরিদর্শনও করেছে।’

ইটিপি প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দা এবং সংশ্লিষ্টরা আমাদের বিষয়টি জানায়। এশিয়ান পেপার মিলে ইটিপি কার্যকর না। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কয়েক মাস আগে আমি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি তাদের ইটিপি কার্যকর নয়। সেটা একটা ভবনের কাঠামো শুধু। সেখান থেকেও নমুনা নিয়েছিলাম।’

সরজমিনে গিয়ে এশিয়ান পেপার মিলের ইটিপি কার্যকর কিনা দেখতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাবুল ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরক্ষণে ইটিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন এখানে পুকুর আছে। ময়লা পুকুরে থাকে আর আমাদের কাগজ প্রোডাকশন অনেক কম তেমন ময়লাই জমে না।’

হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা ভারি বর্ষণের অপেক্ষায় থাকে। বৃষ্টি হলেই বর্জ্য সংলগ্ন খালে ফেলে দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা মাদারি খাল ও কাটাখালি খাল হয়ে হালদায় পৌঁছে যায়। গত কয়েক বছরে মাদারি খালের মাছ কয়েকবার মরে ভেসে উঠেছে। ১০-১২ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে।”

হালদা বাঁচাতে হালদা পাড়ের বাসিন্দা আমিন মুন্না কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য হাতে পেয়ে পায়ে ঠেলে দিচ্ছি আমরা। দেশপ্রেম আসলেই নেই। থাকলে বছরের পর বছর এভাবে প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্রকে ধ্বংস করতো না। আমরা কয়েক দিনের ভেতর সর্বস্তরের জনগণসহ কারখানা ঘেরাও করে মানববন্ধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছি। যদি তাতে কিছু হয়।’

প্রশ্নবিদ্ধ পরিবেশ অধিদপ্তর

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিকের ‘ভাই’ এশিয়ান পেপার মিলের বড় কর্মকর্তা। ফলে বছরের পর বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ এদিকে পড়েই না। এভাবেই ঘটনা ধামাচাপা পড়তে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি লোক, সরাসরি নাম বললে সমস্যা আছে। নাম না বলি। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের প্রভাবশালী কর্তা। তার ইন্ধনেই এতো বছর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এশিয়ান পেপার মিলের পক্ষে। এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে আক্রমণ করেন।’

আরেক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘এশিয়ান পেপার মিলকে বাঁচিয়ে দেওয়ার মূল ইন্ধনদাতা হচ্ছেন আজাদুর রহমান মল্লিক। উনার ধারণা, উপজেলা প্রশাসন, অঞ্চলের পরিচালক ব্যক্তিগত স্বার্থে বিদ্বেষী হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এশিয়ান পেপার মিলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমিন খসরু জানান, ‘কেউ কথা বলতে চাইলে তারা তাদের হাত করে ফেলে। তাদের হাত বিশাল লম্বা। দেখা যায় তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে চাকরি দেয়, নতুবা অন্য সুবিধা দেয়। আর এভাবেই আটকে পড়ে কাজ আর ক্ষতি হয় হালদার।

বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা তো আমার কাছে না। অঞ্চলের সাথে কথা বলেন।’

ভাইয়ের প্রসঙ্গ আনলে তিনি বলেন, ‘না না না…এটা ঠিক নয়।’

উল্লেখ্য, গত ৩০ মে রাউজানের সর্তারঘাট এলাকায় ‘হালদা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্প পরিদর্শন এবং স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বর্জ্য ফেলে সংলগ্ন খাল ও হালদা নদীতে দূষণ ঘটানোর অভিযোগে চট্টগ্রামের এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতেও কোনো কাজ হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!