হামের মড়কে কাঁপছে সাজেকের ১০ গ্রাম

একমাসে ৯ শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ১৫০

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ১০ গ্রামে শুরু হয়েছে হামের মড়ক। এ রোগের প্রাদুর্ভাবে ৩১ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৫০ শিশু। এলাকাবাসীরা জানান, এ এলাকায় গরমের সময় হামের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) নিকেতন চাকমা (১৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে সাজেকের দুর্গম বেটলিং এলাকার সুরেশ চাকমার ছেলে বলে নিশ্চিত করেছে সাজেক ইউপি সদস্য গরেন্দ্র ত্রিপুরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি হামে প্রথম মৃত্যু সাগরিকা ত্রিপুরার (১৩)।

জানা যায়, সাজেকে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। বাঘাইছড়ি উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের তুইচুই ও শিয়ালদাহসহ তিনটি পাহাড়ি গ্রামে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি সাজেক ইউনিয়নের ১০ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এক মাসের ব্যবধানে ৯ শিশু মারা গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ ২৩ মার্চ প্রাণ হারায় সাজেক ইউনিয়নের লুঙথিয়ান পাড়ার খেতবালা ত্রিপুরা (১৩) নামে এক শিশু। এর আগে ২২ মার্চ প্রাণ গেছে গোরাতি ত্রিপুরা (৯)। একই মাসের ব্যবধানে ৬ জনের মৃত্যু হয়। পরে সাজেক ইউনিয়নের অরুণপাড়ায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। এতে প্রায় ১১৭জন শিশু আক্রান্ত হয়। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫০ বলে জানা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহম্মদের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল যায় আক্রান্ত এলাকায়। পরে অরুণপাড়াসহ ৫টি গ্রামে হামে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। আক্রান্ত শিশুদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে। পরীক্ষায় হাম শনাক্ত হলে উন্নত চিকিৎসায় ২৫ মার্চ বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল হামে আক্রান্ত ৫ শিশুকে।

স্থানীয় হেডম্যান জুই পুইতাং ত্রিপুরা বলেন, ‘এখানে বেশ কিছুদিন থেকে হাম রোগ দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও হঠাৎ করে রোববার থেকে পরিস্থিতি আবারও অবনতি হচ্ছে। হাম কেবল সাজেকে নয় এখন দীঘিনালায়ও এই রোগ বিস্তার পাচ্ছে। ত্রিপুরাদের ভ্রান্ত ধারণার কারণে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে। তাদের আমরা হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসার জন্য গেলেও তারা আসতে চাচ্ছে না। তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ত্রিপুরা কমিউনিটির লোকজনকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে।’

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহম্মেদ বলেন, ‘সাজেক দুর্গম এলাকা। হামে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে এক মেয়ে শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমাদের আট সদস্যের মেডিকেল টিম সেখানে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে। কিন্তু পাঁচ শিশুর মৃত্যুর পর অবস্থার উন্নতি হলেও আবার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এলাকাটি এত বেশি দুর্গম যে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র থেকে সেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে প্রায় ১৬-১৭ ঘণ্টা সময় লাগে। দুর্গম এ এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের সরঞ্জাম নিয়ে যেতে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে।’

রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, ‘সেখানে আগে আক্রান্তদের ধারাবাহিকতা এখনো রয়েছে নতুন করে আরও শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!