হাট বন্ধ, ক্রেতার পথ চেয়ে সড়কের পাশে পাহাড়ি কৃষক

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ত্রিপুরাছড়ির কৃষক যতিন বিকাশ তঞ্চ্যঙ্গা। তার একমাত্র পেশা কৃষি। তিনি ক্ষেতের উৎপাদিত পণ্য বেগুন ও লাউ সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কাপ্তাইয়ের হাটবাজার বন্ধ থাকায় এখন নিরুপায় হয়ে সাফছড়ি রাস্তার ওপর বিক্রি করতে হচ্ছে তার ক্ষেতের পণ্য।

মাঝে মধ্যে দু’একজন ক্রেতা আসলেও অধিকাংশ পণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে। দিনে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকার তরকারি। অথচ সাপ্তাহিক বড়ইছড়ি এবং ঘাগড়া বাজারে গড়ে হাজারও টাকার বিক্রি হতো তার ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল।

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাফছড়ি এবং বটতলী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ক্ষেতের টমেটো, বেগুন, থানকুনি পাতা, রাঙ্গা আলু নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন ত্রিপুরাছড়ির শচীন তঞ্চঙ্গ্যা ও বাবুল তঞ্চঙ্গ্যা, সাফছড়ি পাড়ার রুপনা তঞ্চঙ্গ্যা এবং মেনকা তঞ্চঙ্গ্যা। তাদের চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। ক্রেতা কম তবুও মাঝে মধ্যে কিছু পাড়ার লোক এসে নিয়ে যাচ্ছে স্বল্প দামে এসব পণ্য।

তারা বলেন, সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শুক্রবার তারা এ পথের দ্বারে এক হাজার টাকার তরকারি বিক্রি করতে পারতেন। এখন সড়কে গাড়ি চলাচল না করায় ও অফিস বন্ধ থাকায় লোকজনের চলাচল একেবারেই নেই।

একই চিত্র দেখা গেছে ওয়াগ্গার বটতলি পাড়ায়। এ পাড়ায় কাঁচামরিচ বিক্রি করতে এসেছেন মায়ারাম তঞ্চ্যঙ্গা। তিনি বলেন, দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তার ক্ষেতের উৎপাদিত কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০০ টাকার মতো।

কৃষকরা জানান, ক্রেতার অভাবে উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে বেগুন, টমেটো পচে যাচ্ছে। তারা সকলে সীমিত আকারে কয়েক ঘন্টার জন্য সাপ্তাহিক বড়ইছড়ি বাজার চালু রাখার দাবি জানান।

ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মায়ারাম তঞ্চ্যঙ্গা বলেন, বিক্রি না থাকায় তার এলাকার কৃষকের উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হচ্ছে, ফলে চরম আর্থিক দৈন্যতায় দিন কাটছে এদের।

ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমার এলাকার অধিকাংশ জনগণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিপণ্য বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। তিনি সাপ্তাহিক হাটবাজার সীমিত আকারে চালু রাখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষে সাপ্তাহিক হাটবাজার বন্ধ রেখেছে। কারণ হাটবাজারে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতা আসলে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে। তবে তিনি কৃষকদের সাপ্তাহিক হাটবাজার দিন ছাড়া পচনশীল দ্রব্য নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বাজারে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এএইচ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!