চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাটহাজারীর আমান বাজার এলাকার ওই ভবনের কাজ পুলিশ বন্ধ করে দেয়।
হাটহাজারী থানা সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এ সময় জনসমাগম নিষিদ্ধের পাশাপাশি সড়কে হাঁটাচলায়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নির্দেশনা রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমান বাজারের জয়নব কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে রেবতি মহাজনের বাড়ি এলাকায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দত্ত নামে এক ব্যক্তি। যিনি ওই এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় বহিরাগত ২০-২৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন প্রবেশ করায় স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে ওই জমির মালিককে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি ভবন নির্মাণ কাজ থেকে বিরত থাকেননি। নিজেকে কখনো আইনজীবী, কখনো ব্যাংকার, কখনো আবার এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোক পরিচয় দিয়ে এই পরিস্থিতিতেও বহিরাগত শ্রমিক এনে ভবন নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে আসছেন।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই করতে ২০-২৫ জন শ্রমিক জড়ো করেন তারা। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে শ্রমিকরা চলে যায়।
গত শুক্রবার আবারও ভবনের ছাদ ঢালাই করতে বিপুল পরিমাণ ইট, বালু ও কংক্রিট আনা হয়। বাইরে থেকে শ্রমিকদের এলাকায় এনে ছাদ ঢালাই না করতে তাদের আবারও অনুরোধ জানায় এলাকার লোকজন।
নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করায় গত ২২ এপ্রিল ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আহমেদ হোসেন এলাকার লোকজনকে হুমকি দেন। এ সময় তিনি নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচয় দেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে হাটহাজারী থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ জানায় স্থানীয়রা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভবন মালিক বিশ্বজিৎ দত্ত ও তার স্ত্রী হাটহাজারী পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা রীনাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন পরিবর্তনের সাধারণ সম্পাদক সুনীল শীল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এমনিতে করোনার ভয়ে আছি। বাইরের কোন লোককে এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। সেখানে বিশ্বজিৎ দত্ত বাইরে থেকে শ্রমিক জড়ো করে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করতে চাইছেন। আমরা তাকে করোনা ঝুঁকি চলে যাওয়ার পর কাজ করার অনুরোধ করি। এ কারণে তিনি আমাদের বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ধরণের হুমকি দিচ্ছেন।’
নির্মাণাধীন ভবন মালিক বিশ্বজিৎ দত্তের স্ত্রী ও হাটহাজারী পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা রীনা বলেন, ‘পুলিশ এসে আমাদের ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করতে নিষেধ করে গেছে। তাই আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। আমরা এমনিতেও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতাম না।’
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা কোথাও জনসমাগম করতে দিচ্ছি না। আমান বাজারের জয়নব কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিমে একটি ভবনে ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতির খবর পেয়ে ফোর্স পাঠানো হয়। আমরা তাদের কাজ করতে নিষেধ করেছি।’
সিএম/এমএফও