হাটহাজারীতে শতকের ঘর ছুঁই ছুঁই করোনা, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলীর ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি দিয়েই শুরু। গত ২৭ এপ্রিল এই একজনই ছিলেন এই উপজেলার করোনা আক্রান্ত করোনা আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি। একজন দিয়ে শুরু হওয়া এই আক্রান্ত সংখ্যা এক মাসের ব্যবধানে ৮৮ তে দাঁড়িয়ে এখন ছোঁয়ার অপেক্ষা করছে শতকের ঘর।

গত ২৬ মে পর্যন্ত দু-এক দিন পরপর এক-দুই জন করেই বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু ২৭ মে একদিনেই আক্রান্ত হন ৮ জন। পরদিন আক্রান্ত সংখ্যার পারদ এক লাফেই উঠে যায় আশংকাজনক অবস্থানে। ২৮ মে এক দিনেই এই উপজেলায় আক্রান্ত হন ২৬ জন। এক দিনে চট্টগ্রামের কোনো উপজেলায় করোনায় এত আক্রান্তের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।

আক্রান্ত ৮৮ জনের মধ্যে শুধুমাত্র হাটহাজারীর সোনালী ব্যাংক শাখার ১৭ কর্মকর্তার ১০ জন রয়েছেন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে এখানে মারা গেছেন ৪ জন। এদের মধ্যে শুক্রবারই (২৯ মে) দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ মে) তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমতিয়াজ হোসাইন। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে ছিপাতলী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেয়ামত আলী কোম্পানি বাড়ির বাসিন্দা রেহেনা আক্তার (৫০) মারা যান। ওই রাতেই নমুনা প্রতিবেদনে তার করোনা পজিটিভ আসে।

এছাড়া বুধবার (২৭ মে ) করোনা উপসর্গ নিয়ে বুড়িশ্চর ইউনিয়নের দক্ষিণ বুড়িশ্চর মন্টু তালুকদার বাড়ির কাঞ্চন তালুকদার (৫৫) মারা যান। মৃত্যুর একদিন পর নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় তার করোনা পজিটিভ। এর আগে ধলই ইউনিয়নের শিলা আক্তার (৩৩) নামের এক মহিলা মারা যান করোনা আক্রান্ত হয়ে।

রোববার (২৪ মে) রাতে আমান বাজারের নুরনাহার ভবনের মালিক ফরিদা বেগম (৪৫) নামের এক মহিলা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে হাটহাজারী এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়ে উঠেছে। একদিনের ব্যবধানে সর্বশেষ চারগুণ পর্যন্ত বেশি রোগী সনাক্ত হয়েছে। এছাড়া উপসর্গসহ ও উপসর্গ বিহীনঅনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঈদ কেনাকাটা ও অসচেতনতার কারণে হাটহাজারী করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে হাটহাজারী মানুষের সমাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে।

তাদের অভিযোগ, করোনা উপসর্গ নিয়ে স্বজন মারা যাওয়ার তথ্য গোপন করে জনসমাগম ঘটিয়ে জানাজা ও দাফনের আয়োজনের ঘটনাও ঘটেছে। পরে দেখা গেছে ওই মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসে। এছাড়া করোনা রোগী সনাক্তের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের অবহেলায় আক্রান্তের বাড়ি সময়মত লকডাউন না করার অভিযোগও রয়েছে।

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা বিরামবিহীনভাবে কাজ করে গেছি। মানুষ সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে প্রশাসনের সাথে রীতিমতো লুকোচুরি খেলেছেন। অনেকে নানা অযুহাতে নিয়ম মানেননি। দোকানের সামনে দরজা বন্ধ রেখে পেছনের দরজা দিয়ে বেচাকেনা করেছেন। আমরা অভিযান পরিচালনা করে আসার পরে দেখেছি তারা আবারো দোকান খুলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম না মানা ও অসচেতনতার কারণে আজ হাটহাজারী করোনার হটস্পটে পরিণত। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে প্রতিটি সচেতনতামূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়য়ে বেগ পেতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!