১১ হাজার উৎপাদন ক্ষমতা অথচ ৭ হাজারে হিমশিম!

14264363301

দেশে বর্তমানে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা ১০ হাজার ৮৬৮ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেকটা ঘটা করে ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিলে আলোকসজ্জা করে সরকার। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা মাত্র ৭ হাজার মেগাওয়াট পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এজন্য প্রতিদিনই কমবেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এরপর চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরো সেচ মৌসুম শুরু হলে তখন সরকারি হিসেবেই দৈনিক চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে গত ১৪ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট ধরে নিলেও দৈনিক বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে ১০৮২ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ১৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে, ফলে স্থাপিত ক্ষমতা দাঁড়াবে ১২ হাজার ৬৪ মেগাওয়াটে। তাছাড়া রেন্টাল, কুইক রেন্টালকেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ উৎপাদনের মাধ্যমে সেচ ও গ্রীষ্মকালের লোডশেডিং মোকাবিলা করা হবে।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলে বর্তমানে স্থাপিত ক্ষমতা রয়েছে ১০ হাজার ৮৬৮ মেগাওয়াট। সংস্কারের অভাবে ১ হাজার ৮১১ মেগাওয়াট ক্ষমতার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। গ্যাস ও জ্বালানি তেল সংকটের কারণে ১ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এ হিসাবে বর্তমানে দৈনিক উৎপাদনে থাকার কথা ৮ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট। এতে গরমের শুরুতেই দৈনিক ঘাটতি হচ্ছে ৬৩৯ মেগাওয়াট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে যখন বিদ্যুৎ চাহিদা সরকারি হিসাবেই বেড়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট তখন সর্বোচ্চ উৎপাদন করেও ঘাটতি হবে দৈনিক ১০৮২ মেগাওয়াট। এরপর কোনো কেন্দ্র যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরো বাড়বে। তাছাড়া সারা দেশে ৬১ হাজারের বেশি ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় লোডশেডিং মারাÍক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান তারা।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, সরকারের গৃহীত বড় বিদ্যুৎপ্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হওয়ায় এবার লোডশেডিং বাড়বে। এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো শুভ সংবাদও নেই। উল্টো যথাসময়ে কাজ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী ও দেশীয় অর্থ কাটছাঁট করা হয়েছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সরকারি বরাদ্দ কাটছাঁট করে ৬১৯ কোটি ৩৫ লাখ কমিয়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রকল্প সাহায্য ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের বরাদ্দের মাত্র ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। যা মোটেই সন্তোষজনক না। এসব কারণে আসন্ন গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।

বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চাহিদা না থাকায় রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে দৈনিক ৩ থেকে ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম নেওয়া হচ্ছে। গরম বাড়লে বা পুরো সেচ মৌসুমে এই বিদ্যুৎ যোগ করা হবে। কয়েকটি সরকারি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ওভারহোলিং করেও ২-৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এছাড়া সামিট গ্র“পের বিবিয়ানা-৩৪১ মেগাওয়াট, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট, গাজীপুরের কড্ডায় পিডিবি এবং আরপিসিএল পাওয়ার কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৫০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ মডুলার-২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে ১৯ মার্চ থেকে দৈনিক ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। বাকি ১২৫ মেগাওয়াট এপ্রিল নাগাদ উৎপাদনে আসবে। আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চলতি মার্চ মাসের শেষ নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। নবাবগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও পুরো সেচ মৌসুমে উৎপাদনে আসবে। ফলে এবার সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা হলেও তা পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া তেলভিত্তিককেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চালিয়ে  লোডশেডিংমুক্ত রাখা হবে। – আ স

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!