‘হাইলি সাসপেক্টেড’ চবি শিক্ষকের করোনা ছিল কিনা জানা যাবে না কখনও

সংস্পর্শে আসা সকলেই করোনা পরীক্ষা করাবেন

তীব্র শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক সাবরিনা ইসলাম সুইটি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা সে বিষয়ে জানার আর কোনো সুযোগ নেই। কারণ করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ না করেই তার মরদেহ দাফন করেছে পরিবার।

অথচ তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া চবির এই শিক্ষক ‘হাইলি করোনা সাসপেক্টেড’ ছিলেন বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এই অবস্থায় ওই শিক্ষকের পরিবারও করোনা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা নিজেরাই করোনা টেস্ট করাতে নমুনা দিতে চান বলে ওই পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন।

চবি শিক্ষক সাবরিনা ইসলাম সুইটির মৃত্যুর বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি সর্বোচ্চ করোনা ঝুঁকি নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের আইসোলেশনে থেকে করোনা টেস্ট করারও পরামর্শ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

রোববার (৩১ মে) রাতে মেট্রোপলিটন হসপিটালের চিকিৎসক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এসব বিষয়। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি— করোনা নয়, শ্বাসকষ্টেই মারা গেছেন সাবরিনা ইসলাম সুইটি।

মেট্রোপলিটন হসপিটালের মহাব্যবস্থাপক মো. সেলিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাবরিনা ইসলাম সুইটি শনিবার রাত সোয়া ৯টায় আমাদের হসপিটালে ভর্তি হন। আমাদের ৪টা আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিলেন এবং এখনও আছেন। আমরা রোগীর স্বজনদের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। উনাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে না পেরে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সকালে তাকে তার স্বজনরা অন্য হসপিটালে আইসিইউ সাপোর্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওনাকে দেখেই করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন। এরপর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের কেবিনে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। তিনি রাত ২টা ৪৫ মিনিটে মৃতুবরণ করেন।’

মারা যাওয়ার পর এই শিক্ষকের নমুনা নেওয়া হল না কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের হসপিটালে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ১২ জনের মধ্যে ৫ রোগীর নমুনা নেওয়া হয়েছিল ২৪ মে। ৩১ মে রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা কোন রিপোর্ট পাইনি। করোনার নমুনা পরীক্ষায় বিশাল জট থাকায় করোনা লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশনা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা। আমরা রোগীর স্বজনদের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে লাশ হস্তান্তর করেছি।’

সাবরিনা ইসলাম সুইটির ছেলে সাজিদ সামি চৌধুরীর মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি তার চাচার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। তার চাচা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাবী রমজানে ইফতারের সময় নিয়মিত ঠান্ডা শরবত পান করতেন। এতে তার শরীরে নিউমনিয়া গ্রো করে। নিউমনিয়ায় তাকে বেশ কাবু করে ফেলেছে। আমাদের ধারণা তিনি করোনায় নয়, নিউমনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন।’

তাকে স্বাভাবিক অবস্থার মতো জানাজা দেওয়া হয়েছে, নাকি স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে ভাবীর জানাজা পড়েছি এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে তাঁর দাফন করা হয়েছে।’

এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিয়ে মারা গেলেও টেস্টের জন্য নমুনা না নিয়ে দাফন করায় ঝুঁকিতে রয়েছে এই শিক্ষকের পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নমুনা সংগ্রহ না করে দাফন করা উচিত হয়নি। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে পরিবারে। পরিবারের সদস্যরা সচেতন নাগরিক হয়েও মরদেহ থেকে করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ না করার সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।

সাবরিনা ইসলাম সুইটির সংস্পর্শে আসা সকলেই করোনা টেস্ট করবেন বলেও জানান ওই শিক্ষিকার দেবর তাজুল ইসলাম।

সাবরিনা ইসলাম সুইটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। তার স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক। দুই ছেলের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ছেন। আরেকজন এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

এই শিক্ষিকার মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!