হাইটেক ১০ ড্রোন পড়ে আছে চট্টগ্রামের গুদামে, নিলামে তোলার আভাস

উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন হাইটেক ১০টি ড্রোন পড়ে আছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের গুদামে। ড্রোনগুলো নিয়ে কী করা হবে— এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ পড়ে গেছে চিন্তায়। তবে ড্রোনগুলো নিলামে তোলার ইঙ্গিত মিলছে কাস্টমস সূত্র থেকে। ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা এসব ড্রোন জব্দ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, জব্দ ড্রোনের মধ্যে সাতটিই জব্দ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে। অপর দুটি ড্রোনের একটি শুল্ক গোয়েন্দা এবং অপর একটি জেটি কাস্টমস জব্দ করে। এর মধ্যে তিনটি ড্রোনের বিষয়ে মামলাও (নং ২৩৮/১৭, ২৪৭/১৮, ২৭১/১৮) করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে সাধারণত দুই থেকে তিন কেজি ওজনের ড্রোন আনা হয় বিদেশ থেকে। এসব ড্রোনে ক্যামেরা থাকে— যেগুলো সাধারণত ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফাররা ব্যবহার করেন। বিনোদনের জন্যও এসব ড্রোন ব্যবহার করছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ তফসির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘একসময় ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। তাই ওইসব ড্রোন জব্দ করা হয়েছিল। তবে এখন সরকার নীতিমালা করেছে। বিশেষ করে খেলনার ড্রোন আমদানি হচ্ছে।’

জব্দ করা ড্রোনগুলো কিভাবে নিষ্পত্তি করবে, সেসব নিয়ে কী করা হবে— সেটি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে ড্রোনগুলো নিলামে তোলার ইঙ্গিত মিলছে কাস্টমস সূত্র থেকে। এর মধ্যে জব্দ করা একটি ড্রোন নিয়ে শুনানি করবে কাস্টমস। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারলে আমদানিকারক সেটির খালাস নিতে পারবেন।

জানা গেছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা, ২০২০’ জারি করে। এতে বলা হয়, ড্রোন এবং ড্রোনের যন্ত্রাংশ আমদানি তো করা যাবেই, এগুলো উৎপাদনের কারখানাও করা যাবে দেশে।

তবে এই নীতিমালা বিশ্লেষণ করে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এতে এমন সব কঠিন শর্ত দেওয়া আছে, যাতে ড্রোন আমদানি এবং এর উৎপাদন কারখানা করা—দুটোই প্রায় অসম্ভব।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক মোহম্মদ শামীম বক্স বলেন, কীটনাশক ছিটানো থেকে জরিপকাজ পরিচালনা, চলচ্চিত্রের শুটিং থেকে গবেষণা, জরুরি সাহায্য পাঠানো থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা—হেন কোনো কাজ নেই, যে কাজে এখন মনুষ্যবিহীন আকাশযান অর্থাৎ ড্রোনের ব্যবহার নেই। ড্রোনের ব্যবহার যে বাড়ছে, সরকার তা বুঝতে পারছে।

ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালায় ড্রোনকে ক, খ, গ ও ঘ—এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ক-শ্রেণির ড্রোন বিনোদনে; খ-শ্রেণির ড্রোন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিদের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার মতো অবাণিজ্যিক কাজে; গ-শ্রেণির ড্রোন জরিপ, স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাণ, পণ্য পরিবহনের মতো বাণিজ্যিক ও পেশাদারির কাজে এবং ঘ-শ্রেণির ড্রোন শুধু রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।

নীতিমালায় ড্রোন ওড়াতে সবুজ, হলুদ ও লাল নামে তিনটি জোনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। সবুজ জোন হচ্ছে বিমানবন্দর বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) তিন কিলোমিটারের বাইরের এলাকা, যেখানে ড্রোন চালাতে কোনো অনুমতি নিতে হবে না। হলুদ জোনের মধ্যে রয়েছে সংরক্ষিত, সামরিক, ঘনবসতি ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকা, যেগুলোতে অনুমতি নিয়ে ড্রোন চালাতে হবে। আর লাল জোনের মধ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ এলাকা, বিপজ্জনক এলাকা, বিমানবন্দর এবং বিশেষ কেপিআই; যেখানে বিশেষ অনুমতি নিয়ে চালাতে হবে।

১০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় উড্ডয়ন করতে সক্ষম এবং ড্রোনের ওজন ৫ কেজির বেশি হলে ‘ঘ’ ব্যতীত যে কোনো শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়নের জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হতে নিবন্ধন এবং অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ড্রোন চালানোর কারণে জনসাধারণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের কোনো ক্ষতি হলে বা গোপনীয়তা ভঙ্গ হলে ড্রোনচালক ও চালকের নিয়োগকারী দায়ী থাকবেন। ক শ্রেণির ৫ কেজি ওজনের মধ্যে থাকা ড্রোনের বিনোদন ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে উড্ডয়নের জন্য ড্রোনচালকের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে এসএসসি বা সমমানের।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে ২০১৪ সাল থেকে সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতির প্রক্রিয়াটি চলে আসছে। নতুন নীতিমালায়ও তা উল্লেখ আছে। সম্প্রতি আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!