হাইকোর্ট দেখাতে চেয়ে দেশবন্ধু ধরা খেল সুপ্রিম কোর্টে, ১২৫ কোটি টাকা দিতেই হল

অবশেষে ১২৫ কোটি টাকা শুল্ক দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ‘র-সুগারের’ চালান খালাস নিতে বাধ্য হল বহুল আলোচিত দেশবন্ধু সুগার মিল। হাইকোর্টে মামলা করে শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চালানটি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা চালানটি চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্ড কমিশনারেটের বাধার মুখে শেষমেশ পুরো শুল্ক পরিশোধ করেই খালাস করতে হল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটিকে।

জানা গেছে, এর আগে এক-দুইবার নয়, অন্তত ১৩ বার র-সুগার খালাসে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছিল নরসিংদীর দেশবন্ধু সুগার মিল। আর এতেই নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও ঢাকার বন্ড কমিশনারেট। কারখানায় র-সুগার থেকেই চিনি তৈরি করা হয়। সর্বশেষ ব্রাজিল থেকে দুটি জাহাজে ৮১ হাজার ৫০০ টন র-সুগার আমদানি করে দেশবন্ধু সুগার মিল। কিন্তু ওই চালানের র-সুগার খালাস দিতে রাজি হয়নি কাস্টমস হাউস ও ঢাকার বন্ড কমিশনারেট। কারণ দেশবন্ধু বারেবারেই শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে। এসবের দায়ে ১৩টি মামলা চলমান আছে তাদের বিরুদ্ধে। গুরুতর আপত্তি থাকা ও মামলা সংক্রান্ত কারণে বন্ড লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় বন্ড সুবিধাও প্রাপ্য নয় দেশের অন্যতম চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান নরসিংদীর এই দেশবন্ধু সুগার মিল।

জানা গেছে, শুল্ক পরিশোধ না করার সবরকম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর দেশবন্ধু সুগার মিল তাদের আমদানি করা দুটি জাহাজের ৮১ হাজার ৫০০ টন র-সুগারের মধ্যে ৫০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন খালাস নিচ্ছে আপাতত। এ জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসকে শুল্ক দিতে হচ্ছে ১২৫ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাস্টমসের যাবতীয় প্রসেস সম্পন্ন করে দেশবন্ধুর নিজস্ব সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দুই মাস বঙ্গোপসাগরে আটকে থাকার পর চট্টগ্রাম বন্দরের আউটার থেকে খালাস হবে এ পণ্য।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, কাস্টমসের পূর্ণ শুল্ক পরিশোধ শেষে খালাস দেওয়া হচ্ছে দেশবন্ধু সুগার মিলের চালানটি।

জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই এমভি ডিএমসি নেপচুন ও এমভি আইল্যান্ডার নামে দুটি জাহাজ ব্রাজিল থেকে দেশবন্ধু সুগার মিল চিনির কাঁচামাল ‘র -সুগার’ নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে। কারখানায় র-সুগার থেকেই চিনি তৈরি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা দুটি জাহাজে র-সুগার আছে ৮১ হাজার ৫০০ টন।

প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরও বন্ড প্রাপ্যতা না থাকায় পণ্যগুলোর চালান খালাস দেয়নি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টে এর প্রতিকার চেয়ে দেশবন্ধু সুগার মিল কর্তৃপক্ষ আবেদন করার পর হাইকোর্ট ৮ কোটি টাকা নগদে আদায় করে ওই চালান ৭ দিনের মধ্যে খালাসের আদেশ দেন। বার বার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও ঢাকার বন্ড কমিশনারেট যৌথভাবে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট আপিল করে। এরপর ২২ আগস্ট প্রধান বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই পণ্য চালানের ওপর স্থিতি অবস্থা বজায় রাখাসহ আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে নতুন আবেদন করার আদেশ দেন। কিন্তু ৩১ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠান পণ্যের চালানটি শুল্কায়নের মাধ্যমে খালাস নেবে বলে জানিয়ে দেয় হাইকোর্টকে।

অভিযোগ রয়েছে, এবারই প্রথম নয়, এর আগে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে বন্ড গুদাম থেকে অবৈধভাবে কাঁচামাল অপসারণে গত পাঁচ বছরে অন্তত ৯৪৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে দেশবন্ধু সুগার মিল। শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়ের করা ১৩টি মামলা চলছে।

এ বিষয়ে বন্ড কমিশনারেট ঢাকার কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অতীতের সব রেকর্ড বিবেচনা করে দেশবন্ধু সুগার মিলকে বন্ড সুবিধা দেওয়া হয়নি। বার বার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ১৩ মামলা চলমান আছে। তাই এ প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরও বন্ড প্রাপ্যতা দেওয়া হয়নি। ফলে তারা হাইকোর্টে যায়, আমরা মহামান্য হাইকোর্টেও আপিল করেছি। হাইকোর্ট আমাদের আবেদনকে বিবেচনা নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, র-সুগারের চালানের ক্রয়মূল্য এবং শুল্কের ওপর রেগুলারিটি ডিউটি ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম ট্যাক্স ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ১২৫ কোটি টাকার শুল্কায়ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, দুটি জাহাজ থেকে ৫০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন খালাস নেওয়া হচ্ছে। বাকি পণ্য আগামী সপ্তাহে খালাসের প্রসেস করা হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!