হত্যামামলার আসামিরাও যুবলীগের শীর্ষ পদ চান চট্টগ্রাম দক্ষিণে

চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়েছেন কয়েকজন হত্যামামলায় অভিযুক্ত একাধিক আসামি। এর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পটিয়ার দুইজন ও বোয়ালখালীর একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪২ জনের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা পড়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সিভি জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সভাপতি পদে বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি চৌধুরী, দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক, শফিউল আজম শেফু, আকতার হোসেন, এম এ রহিম, নাসির উদ্দীন মিন্টু, মাঈন উদ্দিন চৌধুরী।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন মোহাম্মদ সোলাইমান, আবদুল হান্নান লিটন, নুরুল আমিন, কাজী মো. আলা উদ্দিন, ওসমান গনি, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মহিউদ্দিন মহি, মাহাবুবুল আলম, রাজু দাশ হীরু, জাহেদুল ইসলাম। এদের মধ্যে আবার সাইফুল ইসলাম নামের একজন আছেন, যিনি কেন্দ্রের বিবেচনায় অযোগ্য ঘোষিত হন। কিন্তু তার জন্য বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ সুপারিশ করলে সিভি জমা নেওয়া হয়।

তবে আবেদনকারীদের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কয়েকজন হত্যা মামলার আসামি। এরমধ্যে আছে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আলোচিত আবদুল মালেক জনি হত্যা মামলার আসামি পটিয়া কুসুমপুরার আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মহিউদ্দিন মহি এবং বোয়ালখালীর জাহেদুল ইসলাম ওরফে আবু জাহেদ।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন আবদুল মালেক জনি। এরপর টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী বাদি হয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুকসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়। তবে এ মামলার প্রধান আসামি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। এছাড়া একই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী পটিয়ার মহিউদ্দিন মহি ও বোয়ালখালীর জাহেদুল ইসলাম।

হত্যা মামলার আসামিরা যদি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাহলে মামলার সুষ্ঠু বিচারিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন জনির পরিবার ও সহকর্মীরা।

জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী বলেন, নয় বছর পেরিয়ে গেলেও আমার ভাই হত্যার বিচার পাইনি এখনও। হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার পরও মামলার চার্জশিট হতে কাউকে বাদ দিয়েছে আবার কাউকে কয়েক বার আটক করা হলেও তারা জামিনে বের হয়ে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা এখন রাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। যুবলীগের পদবি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা যদি যুবলীগের পদ পায় তাহলে শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে। আমি এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

হত্যা মামলার আসামি হয়েও বায়োডাটা জমা দেওয়ার বিষয়ে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, রাজনীতি করতে গেলে তো মামলা থাকবে। সব রাজনীতিবিদদের নামে মামলা আছে। কিন্তু তাই বলে কি দলীয় পদ-পদবিতে আসতে পারবে না? এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে যুবলীগের পদ-পদবিতে আসার জন্য দলের শৃঙ্খলা মেনে বায়োডাটা জমা দিয়েছি।

জনি হত্যা মামলার বিষয়ে সায়েম বলেন, মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে। মামলার চার্জশিটে আমার নামে এলিগেশন নেই। স্বাক্ষী শেষে মামলাটি খালাসের পথে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের কারো নাম নেই এ মামলায়। জনি আমার একান্ত সহচর ছিলেন, আমার সঙ্গে সবসময় থাকতেন। তৃতীয় পক্ষ ঘটনাটি করে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ঘটনার সময় আমরা পার্টি অফিসের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম আর ঘটনাটি ঘটেছে নিচে। পার্টি অফিসের দারোয়ান নবী জানে, কে মেরেছে জনিকে। তিনি তো সিআইডি, পুলিশ ও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেদিন আমি প্রোগ্রামে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম মাত্র।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রে বায়োডাটা জমা দিলেও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নেন।

এ ব্যাপার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপির সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপেও ম্যাসেজ দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে যুবলীগের জেলা কমিটির শীর্ষ পদের জন্য সিভি জমা নেওয়া হলেও নেতৃত্ব নির্বাচন হবে সম্মেলনের মাধ্যমে। মে মাসের শেষ দিকে ধারাবাহিকভাবে সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছে দলটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। প্রাথমিকভাবে ২৭, ২৮ ও ২৯ মে তিনদিন তিন ইউনিটের সম্মেলনের কথা আলোচনা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে এই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সম্মেলনে এই দফায় সিভি জমা দেওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকেই নেতা নির্বাচন করা হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কে এম শাহজাহান বলেন, বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির যে দৈন্যদশা তার থেকে উত্তরণের জন্য যুবসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসাবে যুবলীগকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করতে জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি দরকার। সিন্ডিকেটমুক্ত করে গ্রহণযোগ্য সাবেক ছাত্রনেতাদের জেলা যুবলীগের নতুন দায়িত্বে আনলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। যারা সিভি জমা দিয়েছেন প্রত্যেকে সাবেক ছাত্রনেতা ও দীর্ঘদিন যুবলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আমাদের সিভি গ্রহণের সময়সীমা ৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। আগামীতে সম্মেলনের মাধ্যমে এই আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যুবলীগের নেতা নির্বাচন করা হবে।

সর্বশেষ ২০১০ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল। আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি এবং পার্থসারথী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা সেই কমিটি এক যুগ পার করেছে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!