হঠাৎ সড়ক থেকে উধাও গণপরিবহন, মোড়ে মোড়ে চরম দুর্ভোগ

হঠাৎ করে অঘোষিত ধর্মঘটে নগরে গণপরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নগরীর মোড়ে মোড়ে সকাল থেকে অফিস আদালতে যাওয়া কর্মজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগদান করতে পারেনি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল আটটা থেকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরের সব রুটে গণপরিবহন সংকট। কর্মজীবীদের গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোড়ে মোড়ে অপেক্ষারত। চট্টগ্রাম নগরীর সড়কগুলোতে মোড়ে মোড়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষারত মানুষের জটলা। টেম্পো বা কোন ছোট গাড়ি আসলে তার উপর হামলে পড়েন যাত্রীরা।

জানা গেছে, রবিবার (২০ অক্টোবর) নগরীর বহাদ্দারহাট এলাকায় গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় চালক-হেলপার ও মালিককে মোবাইল কোর্টের আওতায় কারাদন্ড দেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক। এরই প্রতিবাদে গণপরিবহন শ্রমিক মালিকরা ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে।

সরেজমিনে অক্সিজেন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ৩ নম্বর রুটের কোচ বাস চলাচল করছেনা। শত শত মানুষ গণপরিবহনে জন্য অপেক্ষা করছে। সিএনজি অটো রিকশা ও টেম্পো করে মানুষ যাতায়াত করছে। তারা এই সুযোগে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া আদায় করেছে। অনেকে পিকআপ ও রিকশায় করেও অফিসে যাচ্ছিলেন।

মুরাদপুর মোড়ে গিযে দেখা যায়, গণপরিহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ। সড়কে কোন গণপরিবহন নেই। ছোট যান সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পো, পিকআপ, রাইডিং শেয়ার পাঠাও, উবারের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। অনেকে গাড়ি না পেয়ে হাঁটাও শুরু করছেন। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও রোগীরা। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে গণপরিবহনের জন্য মানুষের হাহাকার। মানুষ টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা দেখলে হামলে পড়ছে। একইভাবে আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, কাস্টম মোড় সবখানে যাত্রীদের জটলা।

নগরীর ২নং গেইট মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সড়কে বাস, মিনি বাস গুলো নেই। সাধারণ মানুষ রিক্সা বা ছোট গাড়িতে চলাচল করছে। কিন্তু এর মধ্যে রিক্সার ড্রাইভার গুলোকে সড়ক থেকে সরাতেই গায়রে ঘাম ঝরছে।

হঠাৎ সড়ক থেকে উধাও গণপরিবহন, মোড়ে মোড়ে চরম দুর্ভোগ 1

অক্সিজেন মোড়ে কথা হয় ব্যাংকার রফিক আহমেদ রিয়াদ ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এভাবে মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় কখনো কাম্য নয়। সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে দেখলাম সড়কে কোন গণপরিবহন নেই। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। টাইগারপাস এলাকায় মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হান্নান উদ্দিন বলেন, আধা ঘণ্টা ধরে টেম্পোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কোন একটি টেম্পু আসলেও বসার জন্য সিট পাচ্ছি না। দাঁড়িয়েও গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন এলাকায় হঠাৎ করে মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট ডাকা নতুন কিছু নয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যখনই কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় তখনি শ্রমিক সংগঠন গুলো হয়রানি করতে নানা অজুহাতে ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষেকে জিম্মি করে দাবি আদায় করেন। এটির একটি স্থায়ী সমাধান করা প্রয়োজন।

প্রসংগত, নগরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে (১০ অক্টোবর) থেকে ট্রাফিক বিভাগ ১৩ রুটের ১০ ও ৬ নম্বর রুটে বিশেষ অভিযান শুরু করে। পরে সপ্তাহ প্রতি ছাত্রদের ট্রাফিক ব্যবস্থপনার সাথে সম্পৃক্ত করে। বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে নিয়মিত ফিটনেসবিহীন গাড়ি জব্দ, জরিমানা করছে৷

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মনজুরুল আলম বলেন, ‘আমরা কোন ধর্মঘট ডাকিনি। বিআরটিএর অভিযানে চালক, হেলপার, মালিককে কারাদণ্ডের প্রতিবাদে গাড়ি মালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছে৷

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন বলেন, ‘যাত্রী পথচারী মালিক প্রত্যেককে আইন মেনে চলতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে সড়কে অরাজকতার বিষয়টি তুলে ধরবো। সড়ক অবশ্যই শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। মানুষ মৃত্যুর দায়ভার ড্রাইভার ও যানবাহনের মালিককে নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণপরিবহণের মালিকদের সাথে এখনো আমাদের কোন বৈঠক বা আলাপ আলোচনা হয় নি। তারা কিজন্য ধর্মঘট ডেকেছেন তাও আমাদের জানা নেই। আমি আশা করি তারা দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!