চট্টগ্রামে হঠাৎ ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকট, রাতেই আসছে ১৫ হাজার

দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে এ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে গত দুই দিন ধরে। সরকারি হাসপাতালে সংকটের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা চললেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুর পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ডেঙ্গু শনাক্তকরণে আসা রোগী ও তার স্বজনরা। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।

এরকম পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নতুন করে আরো এক কোটি ৬১ লাখ পিস কিট আমদানির জন্য বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) শুধুমাত্র চট্টগ্রামের জন্য আমদানি করা হয়েছে ১৫ হাজার পিস কিট। আগামী দুই দিনের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছেন ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ওষুধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার মেসার্স এসটিপি নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬৫ হাজার পিস আমদানি করেছে। এর মধ্যে ঢাকার জন্য ৩৫ হাজার পিস ও চট্টগ্রামের জন্য ১৫ হাজার পিস কিট সরবরাহ করা হয়েছে বিকেলের দিকে। এছাড়া আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে দেশে আরো সাড়ে সাত লাখ পিস কিট আসবে। আর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবহৃত প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ, ওআরএস, আইভি ফ্লুইড, কলয়েডাল সলিউশনের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এরকম পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নতুন করে আরো এক কোটি ৬১ লাখ পিস কিট আমদানির জন্য বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা সরকারি হাসপাতালে কিটের সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজার থেকেও কিট কিনতে গিয়ে সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ।

ডেঙ্গু আতঙ্কের আগে যেখানে প্রতিটি কিট ১৫০ টাকায় পাওয়া যেতো, অস্বাভাবিকহারে চাহিদা বাড়ার কারণে এখন সেটি ৪০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সরকার প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা করে নির্ধারিত করে দেওয়ায় চড়া দামে কিনেও পরীক্ষা করছে না বেসরকারি ক্লিনিকগুলো।

কিন্তু কিটের উচ্চমূল্য ও সংকটের কারণে সরকারি হাসপাতালেও কয়েকদিন বিনামূল্যে পরীক্ষা করার পর বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র ১০০ পিস কিট সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিনামূল্যে এসব পরীক্ষা করা হলেও বুধবার ও বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়নি বলে জানা গেছে। যদিও চমেক হাসপাতালের আউটডোরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অনেক রোগীকে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের জন্য বাইরের হাসপাতালে পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বাইরে গিয়েও তারা ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ পাননি।

বৃহস্পতিবার নগরীর জামালখান থেকে তিন বছরের শিশুকে নিয়ে এপিক হেলথে যান পিংকি শর্মা নামে এক নারী। তিনি সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কিট সংকটের কারণে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সেখান থেকে শেভরণ, মেট্রো, পপুলারসহ অনেক জায়গায় খবর নিয়ে জানতে পারেন কিট সংকটের কারণে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে এসব ল্যাবগুলো। পরে তিনি ছেলেকে নিয়ে সদরঘাটে সিটি করপোরেশন মেমন জেনারেল হাসপাতালে যান। তবে অন্যান্য স্থানে কিট সংকট থাকলেও সেখানে গিয়ে ছেলের ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারেন পিংকি শর্মা। পরে অবসান ঘটে তার সকল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।

এসময় সিটি করপোরেশন মেমন জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জুয়েল মজুমদার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ জন রোগী ডেঙ্গু শনাক্তকরণের জন্য আসেন। এর আগে এই সংখ্যা দুইশর মধ্যে থাকলেও গত দুই দিন ধরে তা বেড়ে ৪০০ জনের সংখ্যা ক্রস করেছে। মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনায় আমাদের হাসপাতালের যথেষ্ট পরিমাণ কিট মজুদ রয়েছে।’

বিষয়টি স্বীকার করেছেন নগরীর শেভরণ প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পুলক পারিয়ালও। তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে আমাদের কাছে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট না থাকায় অনেক রোগীর পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ দুপুরের পর ঢাকা থেকে চড়া দামে কিট আনায় সীমিত আকারে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘চড়া মূল্যে কিনতে গিয়ে দেড়শ টাকার একটি কিট এখন প্রায় ৪০০ টাকার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এরপরও সরকারী আদেশ মেনে আমরা ভূর্তিকী দিয়ে তা করছে জনস্বার্থে। প্রতিদিন আমাদের কাছে আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী আসে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য।’

অন্যদিকে এপিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক টি এম হান্নান বলেন, ‘আগে যেখানে এক সিজনে ১০০ রোগীও ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য আসতো না। সেখানে এখন দিনেই আসছে দুইশর ওপরে। সে কারণে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোতে কিটের সংকট তৈরি হয়েছে। আমার নিজের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা দরকার, কিন্তু চড়া মূল্য দিয়েও আমি কিট সংগ্রহ করতে পারছি না। এখন সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কিট আমদানির ব্যবস্থা করে তাহলে এ সংকট ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবে।’

পরে রাতের দিকে অনেক চেষ্টার পর ৩০ পিস কিট সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান টি এম হান্নান।

ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘কিট সংকটের কথাটি আমাদের নজরে আসেনি। তবে আপনার থেকে যখন শুনলাম তাহলে আমরা খবর নিচ্ছি।’

এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণে দেশব্যাপী অস্বাভাবিকহারে কিট সংকট তৈরি হয়েছে সেটা সত্য। তাই আমরা জরুরিভিত্তিতে আরো এক কোটি ৬১ লাখ কিট আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। এসব কিট দেশে আসলে আশা করি এ সংকট কেটে যাবে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!