হকারে ভরা মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজ, দুর্ভোগ পথচারীর

অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে নগরীর অলিগলিতে। এই অনিয়ম থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফুটওভার ব্রিজও। চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজের উভয় পাশ দখল করে বসে আছে হকার ও ভিক্ষুক। এতে সাধারণ পথচারীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। হকারদের থেকে কিছু কিনতে ক্রেতারা দাঁড়ালেই লম্বা লাইনের জটলা সৃষ্টি হয়ে যায় ব্রিজের উপর।

সরেজমিন দেখা যায়, মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজের উভয় পাশে অবৈধভাবে দখল করে বসেছে হকার ও ভিক্ষুক।

এই বিষয়ে হকারদের মধ্যে মাথার ব্যন্ড ও ফিতা বিক্রেতা সুজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা খরচ করে দোকানে বসা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এখানে বসি এখন তো মানুষ ব্রিজ দিয়েই হাঁটাচলা করে। ব্রিজের নিচ দিয়ে তেমন কেউ যায় না। এখানে বসলে একটু বেচাকেনা ভালো হয়।’

আরেক বিক্রেতা মুমিন বলেন, ‘আমরা এখানে বসলে তো কারো কোন ক্ষতি হয় না। সাথে আমাদের বাড়তি কিছু আয় হচ্ছে। এই পথে মানুষের চলাচল বেশি তাই এখানে বসা। আমরা তো পুলিশের জ্বালায় শান্তিতে বসতেও পারি না।’

কলেজছাত্রী সোনিয়া সুলতানা সালমা জানান, ‘এ ফুটওভার ব্রিজে হকাররা এমনভাবে দাঁড়ায় আমরা হাঁটতেও পারি না। ব্রিজটি অনেক সরু। পথচারী বিপুল যার জন্য সব সময়ই ভিড় লেগে থাকে। তারপর এই হকারদের বসে দাঁড়িয়ে থাকা।’

হকারে ভরা মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজ, দুর্ভোগ পথচারীর 1

স্কুল টিচার নাজমা আক্তার বলেন, ‘এই হকারদের জ্বালায় আমরা কোথায় যাব? ফুটপাতেও তাদের জন্য হাঁটতে পারি না। এখন ফুটওভার ব্রিজে তাদের জন্য লাইন ধরে হাঁটতে হয়। এ কেমন নিয়ম?’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল শেখ বলেন, ‘আমরা অনিয়মে পটু। ফুটওভার ব্রিজের নিচেও হকার, রাস্তার পাশে চলাচলের জায়গাও হকারদের দখলে, এখনতো ব্রিজের উপরের অংশটুকুও হকারদের দখলে চলে গেছে। আমরা পথচারীরা কোথায় চলাচল করব। আকাশ পথটাই বাকি হকারদের বসার। কোনদিন শুনব আকাশপথও হকারদের দখলে!’

স্কুলশিক্ষার্থী এনামুল হক জানায়, ‘রাস্তায় এত গাড়ি তার জন্য রাস্তা পারাপার করতে ভয় পাই। তাই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পারাপার হই। এখন তো এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়েও চলাচল করতে পারি না। এত মানুষ তারপর হকারদের হাঁটা-বসার জন্য তেমন জায়গা থাকে না।

পথচারী মো. ইরফান মাহবুব বলেন, ‘আমরা জনগণ কোথায় যাব। রাস্তা দিয়ে পথ পার হলে বলে আমরা সচেতন না। এখন তো আমরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার শিখে গিয়েছি তাও তো আমরা এই ব্রিজের ঠিক ব্যবহার করতে পারছি না। এটা পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য হকারদের জন্য না। তাদের জন্য কি আমাদের চলাচলের ব্যঘাত ঘটছে না।’

ব্যবসায়ী সমুজ্জ্বল প্রদীপ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একে তো প্রতিনিয়ত এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে শত মানুষ পারাপার হচ্ছে। মানুষের ভিড়ে ব্রিজ দেখা যায় না।তারপর হকারদের সাথে পাল্লা দিয়ে বসে ভিক্ষুক। আমি তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কেয়ার করিনি। সিঁড়ির মাঝখানে ভিক্ষুক বসা ছিল। মানতে গিয়ে একেবারে ওনার গায়ে গিয়ে পড়েছি। কি রকম একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। এই রকম চললে তো জীবনে চলা দায়।’

ফুটওভার ব্রিজের উপর ৩/৪ জন ভিক্ষুকদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব জামেল মিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এত জায়গা থাকতে ফুটওভার ব্রিজের উপরে কেন বসেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নিচে হকারদের জন্য বসা যায় না। তাছাড়া এখন তো মানুষ নিচ দিয়ে তেমন পারাপার হয় না। সবাই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে আসা যাওয়া করে যার জন্য এখনে বসি। মানুষ যাওয়ার সময় এক দুই টাকা দিয়ে যায়।

মুরাদপুরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা আবুল কাশেম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এই হকারদের জন্য আমরা অনায়াসে হাঁটাচলা করতে পারি না এটা সত্য। কিন্তু শুধু হকারদের দোষ দিলে তো হবে না। আমাদের ও কিছু দোষ আছে আমরা ওদের থেকে কিনেছি বলেই কিন্তু তারা মানুষ যেখানে বেশি পাচ্ছে সেখানে বসে যাচ্ছে। আমরা নির্দিষ্ট স্থান থেকে ক্রয় করলে কিন্তু তারা আর ফুটপাত দখল করে বসত না। আগে আমাদের ঠিক হতে হবে তারপর অন্যদের দিকে আঙ্গুল তোলা প্রয়োজন।

মুরাদপুর পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট সোহেল রানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারাদিন গাড়ি ম্যানেজ করতে করতে আমাদের অন্যদিকে মাথা কাজ করে না। তাও চেষ্টা করি কোন হকার বসলে তাদের তুলে দিই যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে পথচারীরা চলাচল করতে পারে। আমরা হকারদের তুলে দিলে আবারও অন্যস্থানে গিয়ে তারা বসে। থানার ওসি হকারদের জেল জরিমানা করলে বা তুলে দিলে তারা আর ব্রিজ বা রাস্তা দখল করে বসে না।’

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়তই মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজের উপর বসা হকারদের তুলে দিচ্ছি। তাও তারা আবারও বসছে। স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা না করলে আমরা তুলব তারা আবার বসবে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!