সয়াবিনের দাম কমছে লিটারে ৬ টাকা, আজ থেকে কার্যকর

সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, বোতলজাত ১৯৯ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার (২৭ জুন) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। তবে এখনও সাধরণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ভোজ্যতেলের দাম। সাধারণ ক্রেতারা সয়াবিন তেলে দাম আরও কমানো দাবি জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দামবৃদ্ধির অজুহাতে অস্থির হয়েছিল ভোজ্যতেলের বাজার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে ভোজ্যতেলের দাম।

গত অক্টোবর থেকে দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে তিন দফায় সয়াবিনে দাম বাড়িয়েছেন প্রতি লিটার ৫১ টাকা।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ২০০-৪৯০ ডলার কমলেও দেশে তার বিপরীতে কমেছে মাত্র ৬ টাকা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম পাঁচবার উঠানামা করেছে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে অক্টোবরের শেষদিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার।

রোববার (২৬ জুন) দাম কমানোর এ ঘোষণা দিয়েছে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার ভোজ্যতেলের দাম কমিয়েছে।

বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ২০৫ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতলের দাম ৯৯৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোমবার থেকে বিক্রি হবে নতুন দামে।

গত ৯ জুন সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা দাম হবে ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম বেড়ে দাঁড়াল ১৫৮ টাকা।

নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা হলে ভোক্তা অধিকার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

জানা গেছে, ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারে পর এপ্রিলে এসব সুবিধা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি আমদানি করেছেন বড় মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনর্নির্ধারণ করেছিল। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি রেকর্ড পরিমাণ ৩৮ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এরপর গত ৯ জুন কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে টনপ্রতি ১ হাজার ৪৬৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ভোজ্যতেলে দাম ৬ টাকা কমানো হয়েছে এটা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। দফায় দফায় ৫১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার কাছাকাছি হলেও কমানো হোক তেলে দাম। কারণ বিশ্ববাজারে কমেছে। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ভোজ্যেতেলে দাম।’

গত বছরের অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সেসময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময়ও নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বাজারে পাওয়া যায়নি। বর্তমানেও নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বাজারে পাওয়া না যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতরা সাধারণ।

এএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!