সড়কে ‘রহস্যের মৃত্যু’ অন্যের হয়ে জেল খাটা সেই মিনুর

জেল থেকে বেরিয়েছিলেন ১২ দিন আগে

চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় অন্যের হয়ে তিন বছর জেল খাটার পর সদ্য মুক্ত হওয়া নিরপরাধ সেই মিনু আক্তার মুক্তির ১২ দিন পর ‘রহস্যজনভাবে’ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ২৮ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদ সংযোগ সড়কে তিনি নিহত হলেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে ময়নাতদন্ত শেষে তাকে দাফন করা হয়।

পরে তদন্ত শেষে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মহিলাটি সেই আলোচিত মিনু আক্তার। তবে, মিনুর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় রহস্যজনক মনে করেন তার আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ।

রোববার (৪ জুলাই) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে মিনুর নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক থেকে দুর্ঘটনায় নিহত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। শনিবার (৩ জুলাই) বায়েজিদ থানার একটি টিম সীতাকুণ্ড এলাকার লোকজনকে ছবি দেখিয়ে মিনুর পরিচয় শনাক্ত করে।’

জানা যায়, মোবাইল ফোন নিয়ে বিবাদের জের ধরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় পোশাক কারখানার কর্মী কোহিনুর বেগম খুন হন। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উপজেলার গৌরস্থান মাঝেরপাড়া গ্রামের আনু মিয়ার মেয়ে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামীর নাম ছালেহ আহমদ। তিনি স্বামীর সঙ্গে কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জে সাঈদ ডাক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুমী। পরবর্তীতে এ মামলায় বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এক রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের দিন কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।

এর পর ভাসমান বস্তিতে মিনুকে পান কুলসুমী। মিনুর স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে ভাসমান বস্তিতে থাকতেন। মিনুর বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর জাফারাবাদ এলাকায়। তাঁর পিতার নাম সোলাইমান ও মা সালেহ বেগম, স্বামী মোহাম্মদ বাবুল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতিতে। সন্তানের ভরণ পোষণের লোভ দেখিয়ে তাকে কুলসুমীর হয়ে জেলে পাঠানো হয়। মিনু কুলসুমীর কথায় রাজি হয়ে কুলসুমী সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে মিনু কারাবন্দি। পরে বিষয়টি এডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদের নজরে এলে তিনি আদালতে উপস্থাপনে আইনি সহায়তায় ১৬ জুন তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তবে মুক্তির পরে মুক্ত জীবনে ১২ দিনের বেশী মুক্ত পৃথিবীতে বাচঁতে পারেননি সেই মিনু। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে দাফন হতে হয়েছে।

জানা গেছে নিহত মিনু সীতাকুন্ড এলাকা থেকে সন্তানকে মাদ্রাসায় দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোজের ৫ দিন পর ছবি দেখে স্বজনেরা জানতে পারেন মিনু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর মারা গেছে। তবে স্বজনেরা লাশটুকুও দেখতে পারেনি। জানেনা মৃত্যুর কারন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিনু আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, ‘মিনু আক্তার হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় কেমন যেন রহস্যের গন্ধ। রহস্য উম্মোচনে প্রয়োজনে কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত রহস্য উম্মোচন হওয়া উচিত।’

সিএম/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!