সড়কের আতঙ্ক মোটরসাইকেল, গতির নেশা কাড়ছে প্রাণ

সড়ক দুর্ঘটনার ৪০ ভাগই মোটরসাইকেলের

নেপথ্যের কারণ আরও বেশকিছু থাকলেও সড়ক ভয়ংকর হয়ে ওঠার জন্য মূল দায়ী মনে করা হচ্ছে মোটরসাইকেলকে। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানেও আছে সে কথারই প্রতিধ্বনি। সাম্প্রতি সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষ কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মোটরসাইকেল। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে গত মার্চে সারা দেশে ৫৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭৯ জন। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন ২২১ জন।

এ সবকিছুর পেছনে আছে মূলত গতির প্রতিযোগিতা— কে কতো দ্রুতবেগে চালাতে পারে, কার চেয়ে কে বেশি গতি উঠাতে পারে। গতির এই অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতাই মৃত্যুকে ডেকে আনছে সড়কে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার দিনের পর দিন বাড়ছেই। সচরাচর মোটরসাইকেলচালকদের বড় অংশই কিশোর ও তরুণ। এরা যেমন বেপরোয়া, তেমনি এদের অনেকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে তারা নিজেরা যেমন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, তেমনি অন্যরাও পরিণত হচ্ছে তাদের শিকারে।

দেখা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই মূলত ১৪ থেকে ৪০ বছর বয়সী। ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মতো মহাসড়কেও এখন গণহারে মোটরসাইকেল চলছে অবাধে। অথচ অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় এটি অন্তত ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সবমিলিয়ে মোটরসাইকেলে ঝুঁকির মাত্রা সবসময়ই বেশি।

গত মার্চে সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্রে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২১ জন (৩৭.৫২%), বাস যাত্রী ৩৯ জন (৬.৬২%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৪ জন (৫.৭৭%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ১৭ জন (২.৮৮%), থ্রি-হুইলার আরোহী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-টেম্পু-জীপ-পাওয়ারটিলার) ৮১ জন (১৩.৭৫%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-চান্দেরগাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম)২৪ জন (৪.০৭%) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ১১ জন (১.৮৬%) নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা গবেষকদের বক্তব্য, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পিছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন করা, ট্রাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলা, হেলমেট ব্যবহার না করা কিংবা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করা।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ৪২ শতাংশই মোটরসাইকেলের। অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে, দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখের বেশি— যা মোট যানবাহনের ৭০ শতাংশ। দেশে বছরে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ নতুন মোটরসাইকেল বিক্রি হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১৩টি সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলোর অন্যতম কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া; মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা; মহাসড়কে মোটরসাইকেলের আলাদা লেন তৈরি, গণপরিবহন উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা। এছাড়া দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, গণপরিবহনের চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!