স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে অস্ট্রেলিয়া

ফুলটস বলটাকে সোজাই মেরেছিলেন স্টিভেন স্মিথ। উড়ে আসা ফিরতি সেই বল ধরতে চেয়েছিলেন বোলার জফরা আর্চার। বলে হাত ছোঁয়াতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু মুঠোয় গলাতে পারলেন না ইংল্যান্ড পেসার। হতাশায় মাথায় হাত, বসে পড়লেন উইকেটে। স্মিথ যেমন আগুনে ফর্মে আছেন, একটা সুযোগ হাতছাড়া করলে কতটা খেসারত দিতে হয় পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে এবারের অ্যাশেজে স্বাগতিকরা। ওই একবারই সুযোগ দেয়া স্মিথ ক্যারিয়ারের তৃতীয় দ্বিশতক হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে গড়ে দিয়েছেন রানপাহাড়।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের প্রথমদিনে ইংলিশদের হাড়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডা। দ্বিতীয় দিনে সেই জায়গাটা নিলেন স্মিথ। অজি ব্যাটিং লাইনআপের একটা প্রান্তে সেঁটে রইলেন আঠার মতো। তার ২১১ রানে ভর করে ৮ উইকেটে ৪৯৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া।

স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে অস্ট্রেলিয়া 1
আক্ষরিক অর্থেই উড়ছেন স্টিভেন স্মিথ। এবারের অ্যাশেজে ব্যাট হাতে নামা চার ইনিংসে একটি ডাবলসহ তিনটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।

এজবাস্টন টেস্টের দুই ইনিংসে ১৪৪ ও ১৪২ রানের দুটি ইনিংস আছে স্মিথের। লর্ডসে মাথায় আঘাত নিয়েও খেলেছিলেন ৯২ রানের একটি ইনিংস। সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে আর মাঠে নামা হয়নি। খেলা হয়নি পরের হেডিংলি টেস্ট। এক টেস্ট বিরতি দিয়ে মাঠে নামার পর রানের ক্ষুধা যেন আরও বেশি জেগে উঠেছিল, সঙ্গে ছিল টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটসম্যানদের শীর্ষস্থানটা ফিরে পাওয়ার সুখবর। দুইয়ে মিলে ব্যাটে রানবন্যাই বইয়ে দিলেন সাবেক অধিনায়ক।

অথচ দিন শেষে যে এত রান হবে শুরুতে সেটা বোঝা যায়নি। শুরুতেই যখন ক্যাচ ফেলেন আর্চার, স্মিথের রান তখন ৬৫। কিছুক্ষণ বাদে আগেরদিনের ১৮ রানের সঙ্গে আরেকটি রান যোগ করে স্টুয়ার্ট ব্রডের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ট্রাভিস হেড।

লাঞ্চের আগেভাগে ম্যাথু ওয়েডের উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের শান্তিতে মধ্যাহ্ন ভোজের নিশ্চয়তা দেন স্পিনার জ্যাক লিচ। প্রথম সেশনে দুই উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে অজিরা যখন বিরতিতে, দলের রান তখন ৫ উইকেটে ২৪৫। উইকেটে ভরসার প্রতীক হয়ে চলতি অ্যাশেজে তৃতীয় ও ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন স্মিথ। তার সঙ্গী ৯ রান করা অধিনায়ক টিম পেইন।

মধ্যাহ্ন ভোজের পর খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় স্মিথ-পেইনের ১২৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। দ্বিতীয় সেশনে আর একটি উইকেটও পাননি ইংলিশ বোলাররা। দ্রুতলয়ে ব্যাটিংয়ে এই সেশনে রান উঠেছে ১২৪। দেড়শ পার করে চা বিরতিতে যান স্মিথ। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন পেইন। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেট ৩৬৯।

তৃতীয় সেশনের শুরুতেই ইংল্যান্ডের কাঙ্ক্ষিত ব্রেক-থ্রু এনে দেন ক্রেইগ ওভারটন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৫৮ রান করে ফেরেন টিম পেইন। কিন্তু স্মিথের কাজ তখনও শেষ হয়নি।

পেইনের আউটের পরপরই সাজঘরে ফেরেন প্যাট কামিন্স। উইকেটে আসেন মিচেল স্টার্ক। তার প্রথম দায়িত্ব ছিল স্মিথকে যথাসম্ভব সঙ্গ দেয়া। সেটাই করেছেন তিনি। উইকেটের অপরপ্রান্তে নির্ভরতা পেয়ে নিজের কাজটা সেরেছেন স্মিথ। লিচকে ছয় মেরে পৌঁছান ১৯৮ রানে। দুই ওভার বাদে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে স্কয়ার কাটে ৩১০ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি।

ডাবলের পর আর বেশি লম্বা হয়নি স্মিথের ইনিংস। ৩১৯ বলে ২১১ করার পর তাকে থামিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। ২৪ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় এই রান করেন স্মিথ।

স্মিথের পর রান বাড়িয়েছেন মিচেল স্টার্ক। শেষদিকে তার ৫৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে ৫০০’র কাছাকাছি গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা।

পরে ব্যাটিংয়ে এসে এক উইকেট হারিয়ে ২৩ রান তুলে দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। জো ডেনলিকে (৪) তুলে নিয়েছেন কামিন্স। ররি বার্নস ১৫ আর নাইটওয়াচম্যান ক্রেইগ ওভারটন ৩ রানে পরেরদিন শুরু করবেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!