স্বামীর পরকীয়ায় লুকানো গৃহবধূ নাসিমার মৃত্যুরহস্য

সংসার বাঁচাতে স্বামীর নির্যাতন ও পরকীয়ার ঘটনা বাবার পরিবারে কাউকে জানাননি গৃহবধূ নাসিমা। একদিকে যৌতুকের জন্য মার খেয়ে, আবার অন্যদিকে স্বামীর পরকীয়া সহ্য করে হলেও ঠিক রাখতে চেয়েছিলেন বিবাহিত জীবন। তবুও শেষ রক্ষা হল না তার। বিয়ের দুই মাসের মধ্যেই তার রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়।

শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে আত্মহত্যা, অন্যদিকে পুলিশ বলছে অস্বাভাবিক মৃত্যু। এদিকে নিহতের পরিবার দাবি করেছেন পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে গৃহবধূ নাসিমাকে। স্থানীয়রাও ধারণা করছেন, পরকীয়ার কারণে অটোরিকশাচালক স্বামী খুন করেছেন নবপরিণীতা স্ত্রীকে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলেই হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। আপাতত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।

গত ২২ মে রাত ১২টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এর পরদিন ২৩ মে সকাল ৬টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য নাসিমার লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

নিহত গৃহবধূর নাম নাছিমা আক্তার মুন্নি (২০)। অভিযুক্ত স্বামীর নাম আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার লোহাগাড়ার চরম্বা ইউনিয়নের মজিদার পড়ার মতিউর রহমানের ছেলে। গৃহবধূ নাসিমা আক্তার লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের আলী সিকদার পাড়ার আহমদ কবিরের মেয়ে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) নিহত গৃহবধূর বড় ভাই মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘বিয়ের দুমাস পর গত ২২ মে রাত ১২টার দিকে অপরিচিত এক নারী ফোন করে আমাদের জানায় নাসিমা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ কথা শোনার সাথে সাথে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন পরামর্শ দিলে আমি তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশকেও অবগত করি। পরে স্থানীয় জাহেদ ও নুরুন্নবীকে সাথে নিয়ে বোনের শ্বশুরবাড়িতে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি আমার বোন নাসিমাকে একটি খাটের ওপর কাপড় ঢেকে রাখা হয়েছে। আমরা গলায় ফাঁস লাগানোর কোন আলামত দেখিনি। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার বোন এমন নয়।’

মাহফুজ আরও বলেন, ‘ধারণা করছি আমার বোনকে শ্বাসরোধ করে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার মূল রহস্য ধামাচাপা দিতে নাছিমা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছে ওই রাতে অডিও রেকর্ডারে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়েছিল সেখানে। হয়ত তাকে খুন করার সময় কেউ কোন শব্দ না শোনে সেজন্যই গান বাজানো হয়েছিল। আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ওর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আমার বোনের স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছি। এছাড়াও আমার বোনকে প্রায়ই নির্যাতন করতো তার স্বামী।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ আনোয়ার হোসেনের সাথে আমার বোনের বিয়ে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক ও পারিবারিকভাবে হয়েছে। বিয়ের পরপরই তার প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ পায়। বিভিন্ন মহিলার সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে তার অবৈধ মেলামেশা রয়েছে বলে এলাকার অধিকাংশ মানুষ আমাকে বলেছেন। বিয়ের পরেই বোনের দাম্পত্য জীবনে নির্যাতনের শুরু। মূলত মোটা অংকের যৌতুক পেতে সে আমার বোনকে বিয়ে করেছিল। আনোয়ার হোসেন নাসিমাকে বারবার চাপ দিচ্ছিল বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে। কিন্তু দাম্পত্য জীবন ভাল রাখতে নাসিমা সব সহ্য করত। আমাদের কিছু জানায়নি।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!