চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এমন এক কবিরাজের সন্ধান দিয়েছে র্যাব যিনি পেশায় বৈদ্য হলেও নেশায় ধর্ষক। তার টার্গেট অসহায় নারী ও প্রবাসীর স্ত্রী। যাদের হাত থেকে তিনি হাতিয়ে নেন বড় অংকের টাকাও।
গড়নে ছোটখাটো হলেও বয়স তার ৬২ বছর। মুখে রেখেছেন লম্বা দাড়ি, সবসময় পড়েন পাঞ্জাবিও। বেশভূষায় সভ্য হলেও বৈদ্যগিরির আড়ালে তার মূল কাজ ধর্ষণের পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া।
মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার তদন্তে নেমে এই বৈদ্যের অন্ধকার জগতের সন্ধান দিয়েছে র্যাব।
প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে তিন মাস যোগাযোগ ছিল না এক সন্তানের জননী রুপার (ছদ্মনাম)। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তিনি এখান থেকে ওখানে। কেউ দিতে পারেনি তাকে স্বামীর খোঁজ। একপর্যায়ে প্রতিবেশীর পরামর্শে স্বামীর খোঁজ মেলাতে দ্বারস্থ হন ‘পানি বাবা’ নামে এক বৈদ্যের কাছে।
স্বামীর সন্ধান দিতে রুপাকে প্রথমে তিন দফা পানি পড়া খাওয়ান বৈদ্য। বিনিময়ে প্রতিবার রুপাকে গুণতে হয় ৫ হাজার টাকা। কিন্তু পানি পড়ায় কাজ হয়নি, মিলেনি স্বামীর খোঁজ। আবারও বদ্যের কাছে যান রুপা। বৈদ্য এবার দেন অন্য প্রস্তাব।
বৈদ্যের কথা, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলেই কেবল নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ পাবে রুপা। এই কথা শুনেই ভয়ে কাতর রুপা অবশ্য রাজি হননি। কিন্তু কৌশলী বৈদ্য নাছোড়বান্দা। আঁটেন ভিন্ন কৌশল। রুপাকে আবারও পানি পড়া খেতে রাজি করান তিনি ছলচাতুরী করে। এতে মিশিয়ে দেন ঘুমের ওষুধ। শেষমেশ স্বামীর খোঁজে গিয়ে এই বৈদ্যের কাছেই সর্বস্ব হারাতে হয় রুপাকে।
এ ঘটনায় র্যাব-৭ চট্টগ্রামের কাছে অভিযোগ গেলে অভিযানে নামে র্যাব। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাত ৯টায় হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলী প্রকাশ পানি বাবাকে (৬২) আটক করে র্যাব। আটক মোহাম্মদ আলী বাথুয়া এলাকার মৃত সুলতান আহমদের ছেলে।
এ সময় তার কাছ থেকে কবিরাজির বিভিন্ন জিনিসপত্রও উদ্ধার করা হয়।
আটকের বিষয়ে র্যাব জানায়, ভুক্তভোগী রুপার ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একটি সন্তান আছে। রুপার স্বামী গত ছয় বছর ধরে মালেশিয়ায় থাকেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে হঠাৎ করে স্বামীর সাথে সব ধরনের যোগাগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার।
স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য এক প্রতিবেশীর পরামর্শে দ্বারস্থ হন বৈদ্য মোহাম্মদ আলীর।
র্যাব জানায়, ২২ জানুয়ারি শেষবারের মত পানি পড়া খেতে এবার নিজের আখড়া হাটহাজারীতে যেতে বলেন পানি বাবা মোহাম্মদ আলী। সেখানে কৌশলে রুপাকে পানির ভেতর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেয় বৈদ্য মোহাম্মদ আলী। সেই পানি পড়া খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রুপা। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে এলে একটি খাটের উপর নিজেকে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান রুপা। বুঝতে পারেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার দুই দিন পর সোমবার (২৪ জানুয়ারি) র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয় রুপা। র্যাব অভিযান চালিয়ে এই বৈদ্যকে আটক করে।
র্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আটক মোহাম্মদ আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে সে একজন ভুয়া কবিরাজ। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্নভাবে তাবিজ, পানি পড়া দেয় সে। এরপর বিভিন্ন কৌশলের অসহায় নারীদের নিয়ে এসে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করে। তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
আটক আলীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে তাকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয় বলেও জানায় র্যাব।
বিএস/এমএফও