স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, এ কথা শুনলে তিনি কবরেই লজ্জায় কাত হয়ে যেতেন: তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন,‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কটা শুরু হয় মূলত জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর। জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো দাবি করেননি তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি এখন যেভাবে বলে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক! আমার মনে হয় কবরের মধ্যে যদি জিয়াউর রহমান শুনতে পেতেন এ কথা, লজ্জায় উনি কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন।’

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির উদ্যোগে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর:তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে উচ্চ আদালতের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও কেন বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে প্যানেল আলোচকদের কাছে জানতে চান পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

এই প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা আর ঘোষণা দেয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে ঘোষণা বহুজন পাঠ করেছেন। বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ (২৬ মার্চ) করেন তৎকালীন অবিভক্ত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হান্নান। এরপর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা সিদ্ধান্ত নেন সেনাবাহিনীর একজন অফিসার দিয়ে পাঠ করানোর। তখন মেজর জিয়াউর রহমানকে দিয়ে তা পাঠ (২৭ মার্চ) করানো হয়। এ ছাড়া ২৬ মার্চ নিজের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী নুরুল হক শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। নুরুল হকের মতো আরো মানুষ সারাদেশে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।’

info-minister-2
আলোচনা সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করছেন এক শিক্ষার্থী

হাসান মাহমুদ আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যারা এই বিতর্ক তৈরি করেছে তারা ইতিহাস বিকৃত করতে চায়। তবে মানুষ এখন প্রকৃত ইতিহাস জেনে গেছে। এরপরও কেউ কেউ উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় পাঠচক্র করে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য ছাত্রলীগ উদ্যোগ নিতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী ফাল্গুনি হামিদ জানতে চেয়েছেন; ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গৌরব ঐতিহ্য সঙ্গে যায় কী না? এর উত্তরে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে থেকে চট্টগ্রামের মেয়র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগ করতাম আদর্শ ও নীতির মধ্য দিয়ে। তখনকার সাথে এখনকার সময়ের ব্যবধান বা দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। এখন অনেকেই ছাত্রলীগ করেন, যারা জানে না সংগঠনটির মূলনীতি কি? ইতিহাস কি। রাজনীতিতে যে নীতি-আদর্শ ধারণ করা উচিত, তা বর্তমানের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনুপস্থিত।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবে হবার কথা থাকলেও হয়েছে আখের গোছানোর কারখানা। মান অনেক নেমে গেছে। এখন নেতাদের পদলেহন করলেই যাকে তাকে পদ পদবি দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগের কমিটি বানরের পিঠার মত ভাগ হয়। একেক নেতার ভাগে একেক ভাগ পড়ে। কোয়ালিটি মেনটেইন করা হয়না। এজন্য ছাত্র সংগঠন বা তাদের নেতারা একা দায়ী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন ভিসি-প্রোভিসি হবার জন্য ছাত্রনেতাদের কাছে গিয়ে বসে থাকেন। সেখানে এই ধরণের অভ্যাস বা চর্চা হওয়াটা স্বাভাবিক।’

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘সংস্কৃতির সঙ্গে ছাত্রলীগের আগে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মান নেমে যাবার পেছনে আমাদেরও দায় আছে। আমরা তাদের সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছি না।’ একই কথা বলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

আওয়ামী লীগের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর : তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করছে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকশনা উপ-কমিটি। এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে সিআরআই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, রামুর সংসদ সদস্য ও প্রচার-প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান প্রমুখ।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!