স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে কুতুবদিয়াবাসীর : হুমকিতে বায়ুবিদ্যুত প্রকল্প

স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে কুতুবদিয়াবাসীর : হুমকিতে বায়ুবিদ্যুত প্রকল্প 1কক্সবাজার প্রতিনিধি : দেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়া । বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে গড়ে উঠা এ দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ । লবন ও মাছ ধরে জীবন কাটে এ দ্বীপের বাসিন্দাদের । মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিদ্যুতের অভাবে আলোর মুখ দেখছেনা দ্বীপবাসী ।
কিন্তু সরকার জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে বায়ু বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন করলেও তা প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর অব্যবস্থাপনায় হুমকিতে পড়ে এ যেন স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে দ্বীপবাসির। জোয়ারের পানির ধাক্কায় ৩ কিলোমিটারব্যাপী প্রকল্পের প্রতিটি পিলারের গুড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রকল্পভুক্ত জায়গা। ইতিমধ্যে ১৫টিরও বেশী খুটির পাখা অচল হয়ে গেছে। থেমে আছে সংস্কার কাজ।
তবে, কুতুবদিয়া-পেকুয়া-চকরিয়া এলাকায় দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (বান্দরবান) শফিকুল ইসলাম শেখ জানান, পুরো দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৯২ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বায়ুবিদ্যুত এলাকার ৪ কিলোমিটার জায়গা জিও ব্যাগ স্থাপনের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
সুত্র জানায়, দেশের সর্বগ্রথম বায়ুবিদ্যুত প্রকল্পটি ২০০৬ সালে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বেড়িবাঁধের গা ঘেঁসে সমুদ্রসৈকতে দৃষ্টিনন্দন স্থানে স্থাপিত হয়।
১০০০ কিলোওয়াট বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্পটিতে ৫০টি পিলার সদৃশ্য টাওয়ার রয়েছে। প্রতিটি টাওয়ারে মটরের সাহায্যে পাখা ঘুরানোর মাধ্যমে ৫০টি ব্যাটারিতে বিদ্যুত সঞ্চয় করা হয়। ব্যাটারি থেকে লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের মাঝে বিদ্যুত বিতরণ করা হয়।
প্রকল্পটি থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে দৈনিক ৬ ঘন্টা করে বিদ্যুত সরবরাহ করা হতো। চাহিদার ৭ মেগাওয়াটের মধ্যে এখান থেকেই সরবরাহ করা হতো ২ মেগাওয়াট। দ্বীপের প্রায় ৭০০ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পেতেন। প্রকল্পটির যন্ত্রপাতি যথোপযুক্ত মানসম্মত না হওয়ায় ২০১০ সাল থেকে প্রকল্পটি থেকে বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে চালু হলেও আবার বন্ধ হয়ে আছে কেন্দ্রটি। দূর থেকেই বোঝা যায়, অনেক পাখা ভেঙ্গে গেছে। দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রতি বছর অঢেল অর্থ ব্যয় হয়। তার কিছু এখানে কার্যকর ভাবে ব্যয় করা গেলে দ্বীপটির অধিবাসীরা কিছুটা স্বস্তি পেতেন।
প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁসে গড়ে ওঠা দ্বীপ কুতুবদিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে অনেকেই বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু দুর্বল ও নিচু বেড়িবাঁধ অল্প সময়ের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পূনরায় বেড়িবাঁধের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পরবর্তীতে বেড়িবাঁধ তৈরির উদ্যোগ নিলেওএ কাজটি অস¤পূর্ন থেকে যাওয়ায় বিদ্যুত প্রকল্পটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে- এমনটি জানান স্থানীয়রা।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, যে প্রকল্পটি আলী আকবর ডেইল থেকে গোটা কুতুবদিয়ায় বিদুতের মাধ্যমে আলোকিত করার স্বপ্ন পূরণ করার কথা ছিল, সেটি আজ হুমকির মুখে। স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে এলাকার মানুষের।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জানান, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া থেকে দক্ষিণে বায়ু বিদ্যুত ভায়া তাবালরচর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পুরো এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকছে।
তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থানের উপর বালিভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন করে বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যথায় বায়ুবিদ্যুত প্রকল্পের অস্থিত্ব নিয়ে আশংকা রয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!