স্ত্রী ‘সচিবের বউ’, নিজে ‘ডাক্তার’— পটিয়ার প্রতারক বাকলিয়ায় ধরা

চাকরি দেয়ার টোপ দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করেন আজিজ। সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাকলিয়ার বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। তাকে গ্রেপ্তারের পর অনেকেই আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসেন থানায়। সেখান থেকেই তার অভিনব সব প্রতারণার সব তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, এসসসি পাশ আজিজ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ও প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে এক আইনজীবীকে বিয়ে করেন। তারপর আইনজীবী স্ত্রীর নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রচার করেন সেই অ্যাকাউন্টটি সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের স্ত্রীর। আবার আজিজ নিজেকে ওই সচিবের ভাই পরিচয় দেন। সেই সূত্রেই বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিতেন।

আজিজকে গ্রেপ্তারের পরই চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নাহিম হাসান নামের একজন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আজিজের (২৮) বাড়ি পটিয়ার মনসা উপজেলায়। পটিয়ার রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পাশ করে আর পড়াশোনা করেননি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে তিনি না চোখে না দেখলেও নিজেকে তার ভাই পরিচয় দেন, নিজ স্ত্রীকে ওই সচিবের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজিজ তার প্রথম স্ত্রীর বাবার সম্পত্তি নিয়ে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে দিলরুবা নামের এক আইনজীবীর সাথে পরিচিত হন। আর ওই সম্পত্তির মামলা চালাতে গিয়ে জন্যে দিলরুবাকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর প্রথম স্ত্রীকে চকবাজারে আলাদা বাসায় ও দ্বিতীয় স্ত্রী আইনজীবী দিলরুবাকে নিয়ে থাকতেন বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিকে। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারের পর বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন জানান, ‘নিজেকে চিকিৎসক ও নিজের স্ত্রীকে সচিবের বলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন আজিজ। বন্দর, কাস্টমস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুলিশের চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বের হয়ে আসে তার প্রতারণার অভিনব কৌশল।

মামলার বাদি নাহিম হাসান বলেন, ‘আজিজের সাথে আমার পরিচয় এলাকায় থাকার ফলে। আমি এলাকায় খেলাধুলা করার কারণে আজিজের সাথে পরিচয় হয় আমার। আমি তাকে ডাক্তার ও সচিবের ভাই হিসেবে চিনতাম।পরিচয়ের পর ২০১৬ সালে সে আমাকে কাস্টমসে একটি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল।পরে সে আমাকে চাকরি দিতে পারেনি।চাকরি দিতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বলে সময় পার করতে থাকে। গত বছর আমাকে ২ লাখ টাকার একটি চেক দিলেও ব্যাংকে গিয়ে ওই একাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।আর বিভিন্ন সময়ে টাকা চাইতে বাসায় গেলে তার আইনজীবীর স্ত্রীও আমাকে ধমক দিয়ে মামলার হুমকি দিয়েছেন।’

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় নাহিম কল্পলোক এলাকায় আজিজের কাছ টাকা চাইতে গেলে তিনি বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে আজিজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

আজিজকে গ্রেপ্তারের পর থানায় আনা হলেও তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে এফসিপিএসে অধ্যয়নরত বলে জানান। এদিকে তার আইনজীবী স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন— চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে তাকে বিয়ে করেছেন।

ওসি নেজাম আরো বলেন, ‘আজিজকে গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর বেশ কয়েকজন থানায় যোগাযোগ করেছেন, যাদের কাছ থেকে তিনি সচিবের ভাই পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাত করেছেন। এর মধ্যে এক মহিলাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও সে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে পুলিশে ও বন্দরে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলেও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে।’

আজিজের ব্যাপারে আরও তদন্ত হচ্ছে ও তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোও তদারকি করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি নেজাম।

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!