স্ত্রীর প্রেমিক সন্দেহে জুতার মালা পরিয়ে খাওয়ানো হল নিজের বীর্য (ভিডিও)

কনস্টেবলের ‘টর্চার সেলে’ যুবক নির্যাতন

স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া আছে— এমন সন্দেহে কৌশলে অপহরণ করে টানা ৪ ঘণ্টা যুবকের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে এক পুলিশ কনস্টেবল। চট্টগ্রামের পটিয়ায় তার গোপন ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে গিয়ে তাকে উলঙ্গ করে মারধর ও যৌন নির্যাতনের পর ওই যুবককে নিজের বীর্য খাইয়ে দিয়েছেন সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ ওই পুলিশ কনস্টেবল। নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে ৩১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায়। তবে কয়েক দিন আগে যুবককে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশিত হলে অমানবিক এই ঘটনার কথা জানা যায়। ওই ভিডিওতে দেখা যায় ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেনকে চুল কেটে দিচ্ছে এক পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে জুতার মালা পরিয়ে যুবককে বারবার বুকে লাথি দিতে দেখা যায় ভিডিওতে।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের উত্তর দেয়াং কোর্টপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই পুলিশ কনস্টেবলের নাম নেছার উদ্দিন (৪৫)। তিনি চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানা থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রামের আদালতে কর্মরত। তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আরিফ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত রয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার মো. আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ৭ নম্বর জিরি ইউনিয়নের উত্তর দেয়াং কোর্টপাড়া এলাকার আজম আলী হাজির বাড়ির মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে। নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার দুলাভাইয়ের মাধ্যমে কৌশলে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় নেছার। দুলাভাইকে বাড়ির বাইরে বসিয়ে রেখে আমাকে নেওয়া হয় গোপন কক্ষের ‘টর্চার সেলে’। নেছার আমাকে বলল, তুই এখন কোথায় আছস জানিস? এক বড় পুলিশ অফিসারের বাড়িতে। আমার ছোট ভাইও র‌্যাবের বড় অফিসার। তোকে এখন মেরে ফেলে দিলেও আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

চট্টগ্রামের আদালতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল নেছার উদ্দিন
চট্টগ্রামের আদালতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল নেছার উদ্দিন

আনোয়ার বলেন, ‘এরপর আমার ওপর শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। আমাকে উলঙ্গ করে পেটায় সে। উলঙ্গ অবস্থায় আমার ভিডিও ধারণ করে নেছার। এরপর আমাকে জুতার মালা পরানো হয়। একপর্যায়ে নেছার নিজের বীর্য বের কেরে আমাকে জোর করে খাইয়ে দেয়। আমার সাথে যা হয়েছে তা বর্ণনারও যোগ্য না। তার স্ত্রীর সাথে আমার পরকীয়া ছিল— শুধুমাত্র এ সন্দেহ থেকে নেছার এমন ভয়ানক নির্যাতন চালিয়েছে।’

নির্যাতনের শিকার ওই যুবক বলেন, ‘নির্যাতনকালে কনস্টেবল নেছার তার স্ত্রীর সঙ্গে আমাদের এলাকার সাজ্জাত হোসেন রুবেল ও আমার সাথে মেলামেশা আছে— এরকম স্বীকারোক্তি দিতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের পর আমি তার শিখিয়ে দেওয়া কথা বলতে বাধ্য হই। ভিডিও ধারণের সময়ও সে আমাকে পোশাক দেয় না। উলঙ্গ অবস্থায়ই এগুলো ধারণ করে। এরপর নেছার হুমকি দেয় বীর্য খাওয়ানো ও উলঙ্গ ছবি ভাইরাল করে দেবে। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে নেছারের ভয়ে আমি গ্রাম ছেড়ে শহরে আত্মগোপনে আছি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনস্টেবল নেছার উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নিজের পুলিশের চাকরি ও আপন ভাইয়ের পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে লোকজনকে ধরে নিয়ে তার গোপন ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে গিয়ে নির্যাতনসহ নানা অপকর্ম করত। সেখানে লোকজন ধরে নিয়ে জিম্মি করে অর্থও আদায় করা হতো বলে তারা অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সদস্য নেছার উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়। সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর বদলি হয়ে চট্টগ্রামের কোর্টবিল্ডিং শাখায় চলে যান তিনি।’

এদিকে নির্যাতিত যুবক আনোয়ার হোসেনের দুলাভাই মো. সৈয়দ বলেন, ‘আমার শালার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন নেছার উদ্দিন সেটা মানুষের সামনে বলার মতো নয়। তিনি পুলিশের পাওয়ার (শক্তি) দিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে একের পর এক অন্যায় আচরণ করছেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে নেছার উদ্দিনের ব্যক্তিগত মুঠোফোন কল করা হলে নিজেকে নেছার উদ্দিনের ভাই পরিচয় দিয়ে মুঠোফোন সংযোগ কেটে দেন।

নেছার উদ্দিনের ছোট ভাই চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আমার বড় নেছার উদ্দিন। কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চট্টগাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওইসময় ওনার স্ত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে গণধর্ষণ করে রুবেল ও আনোয়ারসহ আরও অনেকেই। এ ঘটনায় গত ২৬ জুন আমার ভাবী বাদি হয়ে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন পটিয়া থানায়। এবার আপনি বলুন, একটি গণধর্ষণের মতো ঘটনা হওয়ার পর তারা কোন্ আচরণ আশা করেন?’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!