স্ক্র্যাপের অভাবে রডের বাজার টলমলে, বন্ধ হচ্ছে একের পর এক রি-রোলিং মিল

কাঁচামালের সংকটে পড়ে নির্মাণশিল্পের অপরিহার্য সামগ্রী রডের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক আগেই রডের দাম চলে গেছে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় নির্মাণশিল্পে অনেকটাই স্থবিরতা নেমে এসেছে। টনপ্রতি ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ গ্রেডের রড।

এখন আবার রড তৈরির জন্য কাঁচামালও পাচ্ছে না রডনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মূল কারণ গত কয়েক মাস ধরে পুরনো জাহাজের আমদানি কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে রডনির্মাতা রি-রোলিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকই বন্ধ হয়ে যেতে পারে— এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অন্তত ৮০টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। পুরনো জাহাজের আমদানি কমে যাওয়ায় এর মধ্যে এখন হাতেগোনা কয়েকটি ইয়ার্ড মোটামুটি সচল রয়েছে। অন্য ইয়ার্ডগুলোতে কাজ নেই, শ্রমিকরা কাটাচ্ছেন কর্মহীন দিন।

শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো স্থবির হয়ে পড়ায় রড তৈরির অন্যতম উপাদান স্ক্র্যাপের বড় সংকট তৈরি হয়েছে। রি-রোলিং প্রতিষ্ঠানগুলো স্ক্র্যাপ দিয়ে বিলেট বানিয়ে রড উৎপাদন করে। রি-রোলিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৭০ ভাগ কাঁচামালের যোগান আসে স্ক্র্যাপ থেকে।

আগে বিদেশ থেকে বিলেট আমদানির প্রবণতা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ রি-রোলিং প্রতিষ্ঠানই নিজেদের কারখানাতে বিলেট তৈরি করে স্ক্র্যাপ নিয়ে। এখন পুরনো জাহাজের আমদানি হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় স্ক্র্যাপের সংকট পৌঁছেছে চরমে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে কয়েকটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে অল্পস্বল্প স্ক্র্যাপ রয়েছে, সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ৩০ হাজার টাকা দামের টনপ্রতি স্ক্র্যাপ এখন বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্ক্র্যাপের সংকট চলমান থাকলে রি-রোলিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ বেশি মূল্যে বাজার থেকে স্ক্র্যাপ কিনে প্রতিষ্ঠান সচল রাখার অবস্থা তাদের নেই।

জানা গেছে, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে পুরনো জাহাজ আমদানিতে হঠাৎ নিরবতা নেমে আসার মূল কারণ প্রথমত ডলার সংকট এবং দ্বিতীয়ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেটার অফ ক্রেডিট বা এলসি খোলার কড়াকড়িতে পড়ে জাহাজ আমদানিও করা যাচ্ছে না।

এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগে যেসব পুরনো জাহাজকে স্ক্র্যাপ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো, বিশ্বব্যাপি মন্দার জের ধরে সেখানকার জাহাজমালিকরা পুরনো জাহাজকে সংস্কার করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। এর ফলে পুরনো জাহাজ স্ক্র্যাপ করার পরিমাণও অনেক কমে গেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!