স্কুলেও পড়েননি, ‘ভয়’ দেখাতে পরিচয় দিতেন সাংবাদিক-র‌্যাবের সোর্স

র‌্যাবের ক্রসফায়ারের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের সোর্সগিরি—সবই করেন তিনি। আবার এসবের ফাঁকে ‘সাংবাদিকতা’ করেন অপরাধ জগত নিয়ে। বিশাল তার নেটওয়ার্ক, পুলিশ প্রশাসনে তার বিস্তর পরিচিতি। তবে তার সবটুকু ছিলো ভণ্ডামি। দুর্বল ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখাতে কখনো পরিচয় দিতেন সাংবাদিক হিসেবে বা কখনো পুলিশের সোর্স। তবে এই ভণ্ডামিই কাল হয়ে দাঁড়ালো কথিত সাংবাদিক ইমরানের।

অবশেষে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হলেন সেই ইমরান ও তার একাধিক সহযোগী।

তবে এলাকাবাসী জানায়, অভিযান চলাকালীন সময়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান চান্দগাঁও-বহাদ্দারহাট এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ভুইস্স্যা।

রোববার (৩১ জুলাই) মো. ইমরানকে (২৮) চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তবে স্থানীয়রা ইমরানের সঙ্গে তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে বলে জানালেও ডিবি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ।

শুধুমাত্র ইমরানের আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও বাকিদের বিষয়ে কোনো বিবরণ দেয়নি ডিবি পুলিশ।

আটক ইমরান পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকার বড় বাড়ির মৃত শাকু ইকবালের ছেলে। বর্তমানে তিনি চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া ডেন্টাল হাসপাতালের পেছনে চাঁন মিয়া আবাসিকের ছেনোয়ারা ম্যানশনের পাশে জিল্লুর কলোনিতে ভাড়া থাকেন।

ইমরানকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক আরিফুল রহমান বলেন, ‘ইমরান নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’

এদিকে ইমরানের বিষয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, ৭ থেকে ৮ বছর আগেও বিভিন্ন চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করতেন তিনি। এসব অপকর্ম করতে গিয়ে একাধিকবার ধরা খেয়েছেন পুলিশের হাতে। হয়েছেন একাধিক মামলার আসামিও। তাই নিজের পরিচয় গোপন করতেই কথিত সাংবাদিক ও পুলিশের সোর্স হয়ে যান ইমরান।’

আরও জানা গেছে, মারামারি, চুরি, জায়গা দখলসহ একাধিক অভিযোগে নগরীর বিভিন্ন থানায় ইমরানের নামে মামলা রয়েছে অন্তত হাফডজন।

২০১৭ সালের ২৪ জুন পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুরাদপুর ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় মো. রায়হান (৩৩) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বেতন-বোনাসের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ইমরান এবং তার সহযোগীরা। এ সময় ইমরান ভুক্তোভোগীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার দু’হাত জখম করেন। পরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়হান পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২ নম্বর আসামি হিসেবে ইমরানের নাম রয়েছে।

একই বছরের ২২ ডিসেম্বর ষোলশহর নাজিরপাড়া কবরস্থান এলাকায় জায়গার বিরোধ নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে ইমরানের বিরুদ্ধে। এ সময় সাইফুলের প্রায় লাখ টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন, ঘড়ি ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। সেই এজাহারে ইমরানকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়।

মারামারি ছাড়াও একসময় চুরিবিদ্যাতেও ঢুঁ মেরেছিলেন এই ইমরান। ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর হাটহাজারী দক্ষিণ ছাদেকনগর এলাকা থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হন ইমরান। এ সময় তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় চুরির মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় তাকে প্রধান আসামি করে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা মো. জাহাঙ্গীর কবির।

মূলত নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি টিভি চ্যানেলে কর্মরত তার এক বন্ধুর সঙ্গে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতেন। তবে ইমরানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা স্বীকার করলেও, তার অপরাধের কোনো দায় নেবেন না বলে জানিয়ে দেন ওই সাংবাদিক।

ইমরানের বিষয়ে আরও জানা গেছে, র‌্যাব ও পুলিশের সোর্স পরিচয়ে এলাকায় তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। র্যা বের ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম আছে জানিয়ে বেশ কয়েকজন থেকে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘থানায় রাজনৈতিক মামলা থাকার সূত্র ধরে ইমরান আমাকে জানায়, র‌্যাবের ক্রসফায়ারের লিস্টে আমার নাম রয়েছে। নাম কাটিয়ে দিতে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। অন্যথায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। পরে বিভিন্ন সময়ে তিনি ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার কাছ থেকে দেড় লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নেন।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!