স্কুলছাত্রের আত্মহত্যায় ‘উস্কানি’ ছিল প্রধান শিক্ষকের (ভিডিও)

জেএসসি দিতে না পেরে কিশোরের আত্মহত্যা

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বয়স সংশোধন ও প্রত্যয়নপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীকে হয়রানি করে তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দিয়েছিলেন কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ। দুর্জয় নামের সেই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করছে প্রভাবশালী মহল। এমন অভিযোগ তুলেছেন মারা যাওয়া শিক্ষার্থী দুর্জয়ের পরিবার।

কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় দাশ বয়স বেশি হওয়ায় সংশোধনের জন্য চাতরী ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস ও নিজ বিদ্যালয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গত ২৯ জুন নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আনোয়ারাসহ চট্টগ্রামজুড়ে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, মৃত্যুর দিন সকালেও বয়স সংশোধন প্রত্যয়নের নামে ২০০ টাকা নেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ। কিন্তু সে প্রত্যয়নপত্রটি দেওয়া হয় কোন ধরনের সংশোধন বা পরিবর্তন ছাড়াই। উল্টো ওই প্রত্যয়নপত্রে ছাত্রের পিতাকে দায়ী করে বিভিন্ন উক্তি করেন প্রধান শিক্ষক সুধাংশু।

মৃত ছাত্র দুর্জয়ের পিতা মিলন দাশ বুধবার (১জুলাই) কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের সামনে এসব কাগজপত্র আনেন।

দুর্জয়ের পরিবার জানায়, কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় দাশ জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে তার জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী বয়স ৩ বছর বেশি হওয়ায় বিদ্যালয় থেকে বয়স সংশোধন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না বলে তাকে জানানো হয়।

এ কথা শোনার পর চাতরী ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস ও নিজ বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে। শেষে চাতরী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বলা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জন্ম তারিখ সংশোধন করে একটি প্রত্যয়নপত্র দিলে তথ্য সেবা কেন্দ্র জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দিতে পারবে। এটি শোনার পর দুর্জয় খুশি মনে ছুটে যায় তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথের কাছে। প্রধান শিক্ষক অফিস সহকারীর মাধ্যমে ২০০ টাকা ফি নিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন।

স্কুল থেকে দেওয়া ওই প্রত্যয়নে দুর্জয়ের বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়, ‘আপনার ছেলের বয়স সংশোধনের ব্যাপারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আপনাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি আপনার ছেলের বয়স সংশোধন করেননি। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ১৭ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। তাই আগামীকাল ৩০ জুনের মধ্যে বয়স সংশোধনের কাগজপত্র জমা করতে ব্যর্থ হলে আপনার ছেলের রেজিস্ট্রেশন না হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা যাবে না।’

এ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দুর্জয় চাতরী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মো. মহিউদ্দিন দুর্জয়কে বলে দেয় এই প্রত্যয়নে হবে না।

দুর্জয় দাশের পিতা মিলন দাশ বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ এসব কিছু বুঝি না, কাগজে কী লিখল জানি না।’

চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে তার কাগজপত্র দেখে জন্মনিবন্ধনটি ঠিক করে দিতে বলেন। এখন দেখি যেটা আছে সেটা নাকি হবে না। আমি তাকে স্কুল থেকে জন্মতারিখটা লিখে একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসলে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করা যাবে বলেছিলাম।’

জানতে চাইলে কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘প্রত্যয়নপত্র নিতে গেলে নির্দিষ্ট টাকা বা ফি জমা দিতে হয়। দুর্জয়ও তা দিয়েছে। বয়সের ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের নীতিমালার বাইরে আমি যেতে পারব না।’

আনোয়ারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, ‘স্কুলশিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনাটি আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে যদি আমাদের কোন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!