সোমবার থেকে উচ্ছেদ শুরু হচ্ছে লালদিয়ার চরে

অনেক জল্পনা কল্পনা আর অনিশ্চয়তার পর অবশেষে উচ্ছেদ হচ্ছে লালদিয়ার চরে অবৈধ বসতি। সোমবার (২২ জুলাই) থেকে শুরু হবে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম। আদালতের নিদের্শনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব বর্তালেও ওই নির্দেশনার লিখিত অর্ডার পেতে দেরি হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় বিলম্ব হয়। সোমবার থেকে টাকা তিনদিন চলবে অভিযান।

চট্টগ্রাম বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম বাডৈর নেতৃত্বে এই অভিযানে অংশ নেবে দুই পুলিশ, বিজিবি সদস্য, একশো শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে ওই এলাকায় নির্মিতব্য চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে ধোয়াশা কিছুটা দূর হলো।

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যনেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, সোমবার থেকে তিনদিনব্যাপী চলবে উচ্ছেদ অভিযান। আশা করছি তিন দিনের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ হওয়া সম্ভব হবে। রোববার থেকে অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে বসবাস করা লোকজনের অনুরোধে একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকা থেকে ইতোমধ্যে আশি ভাগ লোক তাদের বসতি সরিয়ে নিয়েছে। সোমবারের মধ্যে সবাই সরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়ার চরে সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই এলাকায় জনবসতি এবং উচ্ছেদের বিপক্ষে চট্টগ্রামের একাধিক রাজনৈতিক নেতা সরাসরি শেল্টার দেওয়ার কারণে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অনশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে। উচ্ছেদ অভিযান প্রতিহত করতে ওই এলাকার বাসিন্দারা লালদিয়ার চর সহ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বন্দর সূত্র জানায়, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি ২০২২ সাল থেকে পুরোদমে কর্মক্ষম করতে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য পাঁচ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট মাল্টি পোর্ট অপারেটর- আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনোমিক জোন লিমিটেড, দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের বোলোর, বেইজিংভিত্তিক চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গ্লোবাল পোর্ট সার্ভিসেস। এই তালিকা থেকে প্রক্রিয়া শেষে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাবে যে কোন একটি প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, বর্তমানে লালদিয়ার চরে বসবাস করছে সতেরোশ পরিবার। ওই পরিবারে রয়েছে প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা। চারযুগ আগে চট্টগ্রামে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি (বর্তমান জহুরুল হক ঘাঁটি) তার পাশেই লালদিয়ার চর নামক ছোট্ট গ্রামে বসবাস ছিলো তাদের। বিমান বাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলে তখন পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের ভূমি প্রয়োজন হয় সরকারের। তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ক্ষতিপুরণ পাওয়া সাপেক্ষে নিজেদের ভিটেমাটি তুলে দেয় সরকারের হাতে। ভূমিহারা মানুষগুলোর ঠাঁই হয় পাশ্ববর্তী চরাভূমিতে (বর্তমান লালদিয়ার চর)। ভূমিটি চট্টগ্রাম বন্দরের হলেও সেখানে গত ৪৮ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস তাদের।

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!