সেকান্দর চেয়ারম্যানের নির্দেশে রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা

‘শালার পুতরে মার’ বলতেই শুরু হয় নারকীয় হামলা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোসনাবাদে ইউনুস মিয়া (৫৫) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় আহত হয়েছেন একই পরিবারের ৫ সদস্যও। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।

এই ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যামামলাও দায়ের করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. এহসান ও আরাফাত।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২ নম্বর হোসনেবাদ ইউনিয়নের খিলমোগল গ্রামে মোগলের হাট খামারী পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডে হোসনেবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন নিজে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।

নিহত ইউনুস মিয়া হোসনেবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ইউনিয়নের খিলমোগল গ্রামে মোগলের হাট খামারী পাড়ায় এলাকার মৃত দুলা মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জায়গায় সংক্রান্ত বিরোধেই এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় হাবিবুর রহমান, মো. এহসান, আজিজুর রহমান, মহরম মিয়া, আরাফাত, মনির আহমেদ, মো. মামুন, উকিল আহমেদ, এজাহার মিয়া, মো. বাদশা, মো. করিমসহ অন্তত ২০ জনের একটি গ্রুপ অতর্কিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস মিয়ার জায়গার গাছ কাটতে শুরু করে। এ সময় ইউনুস মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে তাদের ওপর লাঠি ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।

জানা গেছে, এর কিছুক্ষণ পর ২ নম্বর হোসনেবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ‘শালার পুতরে মার’ বলতেই আবারও হামলা শুরু হয়। ওই সময় জায়গার মালিক হোসনেবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ইউনুস মিয়া আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় ইউনুসকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই হামলার ঘটনায় ইউনুস মিয়ার ছেলে রাসেলসহ পরিবারের ৫ সদস্যও আহত হন।

হত্যা ও হামলার ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলার দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। মামলায় হোসনেবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন হাবিবুর রহমান, মো. এহসান, আজিজুর রহমান, মহরম মিয়া, আরাফাত, মনির আহমেদ, মো. মামুন, উকিল আহমেদ, এজাহার মিয়া, মো. বাদশা, মো. করিম।

আসামিদের মধ্যে পুলিশ মো. এহসান ও আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন রেজা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই হত্যা ও হামলার ঘটনার সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন ও তার দলবল সরাসরি জড়িত। চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এ হত্যার ঘটনা।’

নিহতের ছেলে মোহাম্মদ রাসেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে আমাকে ও আমার বাবাকে বাটাম ও লোহার রড দিয় মারধর করেন সন্ত্রাসীরা। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর ও তার বাহিনীর লোকজন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে আমার বাবাকে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’

তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমি ও পরিষদের একজন চৌকিদারসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, চিহ্নিত কিছু দুর্বৃত্তের সাথে জায়গা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলছে। আমি উভয়পক্ষকে শান্ত করে সমাধানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা পরিষদে বসে কথা বলার সময় শুনি বাইরে ইউনুস মিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। প্রতিপক্ষরা এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে আমাকে জড়িয়ে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি (ইউনুস মিয়া) কিভাবে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে। এই ব্যাপারে নিহতের স্বজনদের লিখিত এজহারের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!