সেই মাসুদ প্রক্সি দিয়েছেন আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়া মাসুদ সরকার এর আগে আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। সেগুলোতে বিনা বাধায় উৎরে গেলেও পার পাননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রোববার (৩১ অক্টোবর) রাতে প্রক্টরিয়াল বডির কয়েক ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন প্রক্সি মাসুদ।

এর আগে বিকেলে ডি ইউনিটের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কলা পাঠকক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডি অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রাখে। মাসুদ সরকার (২৫) জুলকারনাইন শাহী নামের এক ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন।

মাসুদ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের দহবন্ধ ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি কারমাইকেল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে জুলকারনাইন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এ আর এম শরিফুল ইসলাম জর্জের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ সরকার নামের ওই তরুণ স্বীকার করেছিলেন, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি প্রক্সি দিতে এসেছেন।

প্রক্টরিয়াল বডির জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানান, তিনি ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের সদস্য। এই চক্রে তিনি ছাড়াও সদস্য আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল সরকার ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া। এছাড়া চক্রের মূল হোতা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক।

মাসুদ জানান, টাকার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্বদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অন্যের হয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে তার চক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করে বিভিন্ন ধাপে কাজ করতো। এমনকি পরীক্ষায় চান্স নিশ্চিত করার কথা বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করতেন তারা।

পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের সদস্য মাসুদ জানান, তারা বিভিন্ন ধাপে কাজ করতেন। প্রথমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খুঁজে বের করা হতো। ভর্তিচ্ছু পাওয়া গেলে চক্রের মূল হোতা ওমর ফারুক তাদের সাথে টাকার কনট্রাক্ট করতো। পরে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীর ছবির সাথে মিলে এমন একজন প্রক্সি দাতাকে খুঁজে নেয়া হতো।

মাসুদ আরও জানান, করোনা এবার তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ ছিল। পরীক্ষার হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়ায় জালিয়াতি করা তাদের জন্য অনেকটা সহজ ছিল। কারন অনেকেই মাস্ক খুলে চেহেরা মিলিয়ে দেখতেন না।

প্রক্টরিয়াল বডি জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মাসুদের মোবাইল, ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেটে বেশি কিছু তথ্য পেয়েছে। যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ ও টাকার লেনদের প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। সে আপাতত আমাদের হেফাজতেই আছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!