সেই ডাকাত পুলিশের বিরুদ্ধে এবার স্ত্রীর মামলা

ডাকাতি মামলায় চাকরি হারানো পুলিশ সদস্য আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী কোহিনুর আক্তার। রোববার (১৯ জানুয়ারি) নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোতাহার হোসেনের আদালত হাটহাজারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আব্দুর রউফের (৪৩) সাথে অপর দুই অভিযুক্ত হলেন তার ছোট ভাই মো. মিলন (৩৫) ও সৎ মা রোকেয়া বেগম। আব্দুর রউফ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মৃত নেছার আলীর ছেলে। স্ত্রী কহিনুর আক্তার ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মৃত শাহজাহানের মেয়ে। তারা কুয়াইশ সংযোগ সড়ক সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করছিলেন দীর্ঘদিন।

মামলার বিবরণে বাদি উল্লেখ করেন, ২০০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যতদিন আব্দুর রউফের চাকরি ছিল ততদিন তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। সুখের সংসারে একটা পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু পুলিশের চাকরি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর রউফ তার সৎ মা রোকেয়া বেগমের পরামর্শে যৌতুকের জন্য স্ত্রী কোহিনুরের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। ধারাবাহিক নির্যাতনে তার গর্ভের দুটি সন্তান নষ্ট হয়েছে বলেও দাবি করেন কোহিনুর।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর কোহিনুরকে মারধর করে ৪ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তারা তিনজনই ভাড়ায় কোহিনুর ও তার সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আবার গত ২ জানুয়ারি ফিরে এসে রউফ ও তার ভাই মিলন টাকা দাবি করলে কোহিনুর তার মা-বাপ না থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমার আত্মীয় স্বজন এত টাকা দিতে সক্ষম নয়। তখন দুই ভাই মিলে কোহিনুরকে আবার মারধর করে। কোহিনুর আহত অবস্থায় হাটহাজারী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি।

কোহিনুর আক্তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, চাকরি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর নিয়মিতই নির্যাতন করতো। কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে সব সহ্য করেছি। আমার ছেলেটা বড় হচ্ছে। তারও একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। কিন্তু রউফ দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর আমিরবাগ আবাসিক এলাকায় ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ চৌধুরীর বাসায় অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম থাকার অজুহাতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ দেড়লাখ টাকা, এক লাখ টাকার চেক এবং ২০ থেকে ২৫ ভরি সোনার গয়না লুট করেন তারা। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দেন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) আবু সালেহ মোহাম্মদ মোফাজ্জল হক, তার গাড়ির ড্রাইভার আবদুর রউফ ও এহছানুল ইসলাম। ড্রাইভার ও দেহরক্ষী দুজনই পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার। ডাকাতির ওই ঘটনায় ২০০৮ সালে তারা তিনজনই গ্রেপ্তার হয়ে চার মাস জেল খাটেন। ঘটনার পরপরই তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রউফ জামিনে থাকা অবস্থায় ২০১২ সালে ছিনতাই করতে গিয়ে নগরের চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন পর ওই মামলা থেকেও জামিনে ছাড়া পান তিনি। ছাড়া পাওয়ার পর নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা।

ওই সময় নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ) জোনের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১৩ মে তিন পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু এর এক দিন আগেই তারা হাইকোর্ট থেকে মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। যার কারণে নিম্ন আদালতে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে আব্দুর রউফের দুটো মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!