সুপেয় পানির সংকটে ৩০ হাজার মানুষ

চট্টগ্রামের পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া এলাকা হতে শিল্প কারখানাগুলো অবৈধভাবে পানি উত্তোলনের প্রতিবাদে পাঁচুরিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সকালে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজন করে। এতে উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া, হুলাইন, চরকানায় গ্রামের দুই শতাধিক গ্রামবাসী এ মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই, হুলাইন, পাঁচুরিয়া এবং হাবিলাসদ্বীপ গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপতি ৩৫০টি টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়লে গ্রামগুলোর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়ে। যে আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে গ্রামগুলো এ পানি শূন্যতা তাদের মধ্যে ছয়টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই এবং বেশিরভাগই বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান ছাড়া পরিচালিত হচ্ছিল। তাদের সৃষ্ট দূষণে পাশের বোয়ালখালী, গরুলতা এবং আলমডাঙা খালের পানি দূষিত হয়ে পড়লে গ্রামবাসী সুপেয় পানির পাশাপাশি চাষাবাদের পানির ও তীব্র সংকটে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অমান্য করে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে জরিমানাও প্রদান না করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। পানি আইনের অধীনে দেশে কোনও এলাকাকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা দাবি জানিয়ে প্রথম আইনি কার্যক্রমকে তোয়াক্কা না করে এসব শিল্প কারখানা এখনও ভূগর্বস্থপানি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের স্ব স্ব মিল কারখানায়। যার ফলে চার গ্রামে পানি শুন্যতা তীব্র আকার ধারন করছে। অনতিবিলম্বে মিল কারখানার পানি উত্তোলন বন্ধ করে চার গ্রামের হাজারো মানুষের সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করার জন্য আহ্বান জানান।

জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। রায়ে চারটি গ্রামে অব্যাহতভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত পানি আইন, ২০১৩-এ ধারা (১৭)-এর অধীনে চরকানাই, হুলাইন, পাঁচুরিয়া এবং হাবিলাসদ্বীপ গ্রামগুলোকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিবাদি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসককে আদালতে আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের করা দূষণের পরিমাণ যাচাই করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে এই চারটি গ্রামে বিকল্প পানির ব্যবস্থা না করে ভূ-গর্ভস্থপানির উপর নির্ভর করে কোনও লাল বা কমলা- খ শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হতে পারবে না।

পটিয়া উপজেলায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া এবং কার্যকরী বর্জ্যশোধনাগার প্ল্যান ছাড়া কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান যেন পরিচালিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে মেমো প্রস্তুত করে আদালতে দাখিলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান এবং সাঈদ আহমেদ কবীর।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, এড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, এড. মুজিবুর রহমান, আলী নেওয়াজ চৌধুরী, দিপংকর বাবু, আশিষ সেন, কলামিস্ট মুসা খান, ইউনুস খান জসিম, মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, দোলন বড়ুয়া, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!