সুইসাইড নোট লিখে গোপালগঞ্জে চট্টগ্রামের ছেলের আত্মহত্যা

'ড্রেসগুলো কুরিয়ার করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দিও'

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নোমানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে গোপালগঞ্জের চর সোনাকুড় এলাকার মেস থেকে নোমানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় একটি ‘সুইসাইড নোট’ও উদ্ধার করা হয়। নোমান বশেমুরবিপ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি।

নোমানের বাবা নেই। মা সাতকানিয়ার মধ্যম এওচিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। তার বড় চাচা আব্দুস সালাম এওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক।

চর সোনাকুড়ের মেসে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, রাত ১০টার দিকে নোমানের কক্ষ থেকে পানি বের হতে থাকলে তাদের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ওই কক্ষে ঢোকে। ঢুকেই তারা নোমানকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাসহ পুলিশ এসে নোমানের নিথর দেহটি উদ্ধার করে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফ্যানের হুকের সাথে তার মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। একতলা একটি বাড়িতে মেস করে ১৫ জন ছাত্র থাকেন। সে ওই মেসের একটি রুমে একা থাকতো।

সুইসাইড নোট লিখে গোপালগঞ্জে চট্টগ্রামের ছেলের আত্মহত্যা 1

এ সময় নোমানের কক্ষ থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ও উদ্ধার করা হয়। ওই নোটের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা না হলেও মেসের এক ছাত্র জানিয়েছেন, ‘সুইসাইড নোটে লেখা হয়েছে ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ওর একটা অসুখ রয়েছে যেটা সহ্য করতে না পেরে সে সুইসাইড করেছে। সে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ছোট বোনের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছে। বন্ধুদের অনুরোধ করেছে, ওর ড্রেসগুলো যেন কুরিয়ার করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়; আর মালামালগুলো যেন বিক্রি করে দেয়।’

বশেমুরবিপ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান জানিয়েছেন, ‘ওই ছাত্রের মায়ের সাথে কথা বলেছি। তার মা ছেলের মোবাইল ফোনে কল করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন রাত ৯টার দিকে ছেলের সাথে তার কথা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য মলিকুলার বায়োলজি পরীক্ষার বিষয় নিয়ে ছেলে তার সাথে কথা বলেছেন। পরীক্ষার পর বাড়িতে যাবে বলেও মাকে জানিয়েছিল নোমান। তার বাবা বেঁচে নেই।’

নোমানের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানসিকভাবে নোমান খানিকটা অসুস্থ ছিল। এ জন্য বেশ কয়েকবার চিকিৎসাও করানো হয়।

সোনাকুড়ের মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, আত্মহত্যার এই ঘটনার আগে সোমবার তার আচরণে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। বুধবার মেসের বাজার করেছে। নামাজও পড়েছে।

এদিকে নোমানের মৃত্যুতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেমেছে শোকের ছায়া। ফেসবুকে মোজাম্মেল হক নাইম নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। যখন ওর সাথে প্রথম পরিচয় হয় ও তখন ক্লাস সিক্সে; সাময়িক পরীক্ষার সময় একই টেবিলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। তখন একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম, ওর মাথায় সবসময় টুপি পড়া থাকতো। তার স্বভাব চরিত্র ছিল অসাধারণ। এই খবরটা যেন আমার কেমন জানি ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে! যদি আত্মহত্যা হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য কষ্ট হবে না; কারণ আত্মহত্যা মহাপাপ জীবন।’

এদিকে নোমানের আত্মীয় মিজবাহ উদ্দীন আবিদ মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘আসলে এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা— আমরা পারিবারিকভাবে সন্দেহে আছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!