সীতাকুন্ডের বিবি আমেনা এখন আর ভিক্ষুক নয়!

শেখ সালাউদ্দীন, সীতাকুন্ড প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত সৈয়দপুর ইউনিয়নে একটি গ্রামের নাম বাকখালী। এ গ্রামে বসবাস করে আসছেন বিবি আমেনা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আমেনার বিয়ে হয় একই গ্রামের আবুল বশরের সাথে। ঘর সংসার বিষয়ে অজ্ঞ ছিল তাই শাশুড়ির নির্যাতন ও চরম অবহেলায় জীবন কাটতে লাগল তার।

amena-pic2

এরপর ১৫ বছর বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম হয় এবং ১৭ বছর বয়সে ২য় সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কৃষি কাজ করে সুন্দর ভাবেই দুই সন্তান নিয়ে সংসার চলছিল তাদের। চোখে মুখে যেন তার অনেক স্বপ্নের উকিযুকি।এরই মধ্যে বিবি আমেনার শাশুড়ি মারা গেলেন। জীবনে অনেক আশা ছিল দুই ছেলে নিয়ে ভবিষৎ জীবন উজ্জল হবে।

 

কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস,স্বামী হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দুই ছেলে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। একমাত্র উপার্জনকারী ছিল তার স্বামী আবুল বশর। তার আয়ের উপর তাদের সংসারের ব্যায় নির্বাহ হত। মৃত্যুকালে তখন নগদ কোন টাকাও রেখে যায়নি। আমেনার আশা ছিল বড়ছেলে সংসারের হাল ধরবেন এবং তাদের দুঃখ কষ্টগুলো একে একে দুর হবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।

 

পেটের তাগিতে একটু কাজের আশায় গ্রামের পর গ্রাম মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিবি আমেনা। কিন্তু কাজ আর পেলেন না। ক্রমশো মানুষের অবহেলার আর অসর্ম্মানের পাত্র হলেন তিনি।ব্যবসা করার ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে ব্যবসা করা সম্ভব না হওয়ায় রাস্তা ও মাঠ থেকে কচুর শাক সংগ্রহকরে তা হাট বাজারে বিক্রয় শুরু করেন।

 

কিন্তু শাক বিক্রয় করে যা আয় হয় তা দিয়ে পুরো পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।পরবর্তীতে তার ছোট ছেলে একটি চায়ের দোকানে চাকুরি নিলেন। কিন্তু সংসার চালাতে না পেরে মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার অন্বেষনে ঘুরে বেড়ান দিনভর। কোনো উপায় না দেখে এক পর্যায়ে ভিক্ষা করার কাজ তিনি বেছে নিলেন। এই ভাবে কাটতে থাকে আমেনার কঠিন জীবন।

 

নতুন জীবন গড়ে তোলার আশার এদিক ওদিক ছুটে নতুন পথের সন্ধান খুঁজতে থাকেন বিবি আমেনা। এরপর একদিন বিকেলে হঠাৎ ইপসার সমাজ উন্নয়ন সংগঠক মাহাবুব আলম এর সাথে তার দেখা হয়। মাহাবুব আলম তার চোখে জল ও স্বপ্নের আলো দেখতে পেয়ে আমেনার কাছে জানতে চাইলে আমেনা জানায়, ভিক্ষা করাটা তার পছন্দ নয়।সমাজে তিনি সম্মানের সাথে বাঁচতে চায়।তার সন্তানদের যেন কেউ বলতে না পারে ভিক্ষুকের সন্তান।

 

তিনি আরো জানায়, তাকে কেউ বাড়ীর সামনে একটা চা ও মুদি দোকান করে দিলে তা হলে তিনি ভিক্ষা পেশা ছেড়ে দিবেন। পরে মাহাবুব আলম তাকে ইপসার সমৃদ্ধিকর্মসূচির সমন্বয়কারী মোঃ দিদারুল ইসলামের কাছে নিয়ে যান। এরপর ইপসার সমৃদ্ধি কর্মসূচির সমন্বয়কারী মোঃ দিদারুল ইসলাম তার স্বপ্নের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। পরে তার সাথে একমত হয়ে স্বপ্নবাস্তবায়নের জন্য পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ এর অর্থায়নে পরিচালিত সমৃদ্ধি কর্মসুচির আওতায় মানবমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাকে একটি দোকানঘর তৈরি করে দেন এবং দোকানের পণ্যও ক্রয় করে দেন।

 

ব্যবসা শুরুর এক মাস পরে বিবি আমেনার ছেলেকে চায়ের দোকান চাকুরি থেকে নিয়ে আসেন। এখন দোকানে বসে ব্যাবসা করে তার ছেলে। বিবি আমেনাও গ্রামে গ্রামে ফেরী করে রকমারী জিনিষ পত্র বিক্রি করেন। রিতিমত তিনি একজন জাত ব্যবসায়ী।বিগত তিন মাসে দোকানের বিভিন্ন পণ্যের ও ফেরীর টাকা মিলিয়ে প্রায়-৭৮০০০ টাকা এবং ব্যাংকে জমা রয়েছে আরো ৭৫০০০ টাকা।

 

শুধু তাইনয় ৮৩০০ টাকা দিয়ে ইতো মধ্যে হাঁট থেকে সাথে ৩টি বাচ্চাসহ একটি ছাগল ও দোকানের মুনাফা দিয়ে একটি রঙিন টেলিভিশনও ক্রয় করেন তিনি।তবে পূর্বে ঘরে ও দোকানে বিদ্যুৎ এর সংযোগ ছিল না,এখন দোকানে ও ঘরে বিদ্যুৎ এ ঝলমল করছে।

 

এখন সমাজে আমেনা সন্তানদের গ্রামের সবাই ব্যবসায়ী হিসেবে সম্মান করেন। এভাবে বিবি আমেনাদের মত সমাজে অবহেলিত অসহায় নির্যাতিত মানুষের পাশে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সমাজে দারীদ্রতা অনেকটা দুর হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!