সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে পানি সংকটের জন্য দায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো

সমাধানের জন্য চট্টগ্রামে আসছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

জাহাজভাঙ্গা শিল্পের জন্য খ্যাত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। এটি বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। দেশের অন্যতম এ শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় তিন শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকার অধিক। আরও বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলে সম্প্রতি সৃষ্টি হয়েছে পানি সংকট। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে ভূগর্ভস্থ পানি। এর ফলে সীতাকুণ্ডে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে এ অঞ্চলে অবস্থিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম। পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানিরও সংকট। এ অবস্থায় সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলের পানি সংকটের সমাধানের দাবি ব্যবসায়ীদের। এ সংকট সমাধানে কাল শুক্রবার (২৮ জুন) চট্টগ্রামে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম চেম্বারের সম্মেলন কক্ষে সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় মিলিত হবে মন্ত্রী।

জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইস্পাত কারখানা ৫১টি, সিমেন্ট কারখানা চারটি, ঢেউটিন তৈরির কারখানা তিনটি, তৈরি পোশাক কারখানা দুটি, কাঁচ তৈরির কারখানা একটি, পাটকল ৯টি ও চারটি সুতার কারখানা আছে। এছাড়া শতাধিক জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এখানে। জিপিএইচ ইস্পাত, আবুল খায়ের গ্রুপ, পিএইচপি, বিএসআরএম, কেএসআরএম, কেডিএস, টিকে গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, মোস্তফা হাকিম, ইউনিটেক্স, বসুন্ধরাসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সীতাকুণ্ডে। এ অঞ্চলের আছে ইস্পাত, সিমেন্ট, টেক্সটাইলসহ উৎপাদন খাতের বড়-ছোট মিলে ৩০০ অধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আছে এক লাখের অধিক কর্মসংস্থান। এ অবস্থায় পানি সংকট সমাধান না হলে শিল্পগ্রুপগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হবে। এর প্রভাব পড়তে অর্থনীতিতে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের শিল্পাঞ্চলে পানি সংকট রয়েছে। সীতাকুণ্ডের সাথে চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি প্রজেক্টের সমন্বয় করা হতে পারে। এছাড়া সীতাকুণ্ডের শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়া আছে। সেগুলো নিয়ে মন্ত্রী মহোদয় আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করবেন।’

তবে বিশেষজ্ঞদের মত হল শিল্প উৎপাদনে খাল-বিল ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার রিজার্ভার তৈরি করে ব্যবহার করলে সীতাকুণ্ডে পানি সংকট দূর হতে পারে। তবে অভিযোগ রয়েছে জিপিএইচ ইস্পাতসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খাল ও ছড়ার গতিপথ পরিবর্তন করে তাদের রিজার্ভারে পানি নিয়ে যায়। এতে করে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজের কর্মকর্তা তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে পানির সংকট আছে। পানি পাওয়া যাচ্ছে না।’

সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন কাজে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, সে পরিমাণ পানি সীতাকুণ্ডের ভূগর্ভে নেই। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য হয়ে খালে গতিপথ পরিবর্তন করে তাদের রিজার্ভারে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পাহাড় ও মাটি ধসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনের সাংসদ ও ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা দিদারুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিন বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের শিল্পাঞ্চলের ব্যবহার ছাড়াও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। পানি সংকট সমাধানে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ প্রজেক্টটার কাজ মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত হবে। এতে চট্টগ্রাম ওয়াসাও সংযুক্ত থাকবে।’

সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রাক্তন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘কেএসআরএমের মতো শিল্পগ্রুপগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পানি উত্তোলন করে ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রিজার্ভার তৈরির অনুরোধ করেছিলাম। রিজার্ভার তৈরি করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার কাজটি করছে একমাত্র আবুল খায়ের গ্রুপ।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!