সীতাকুণ্ড ছাত্রলীগের ‘টাকার কমিটি’র তদন্ত নিয়ে রহস্যের নীরবতা কেন্দ্রের

বিষয় ছাত্রলীগের, বাহানা আওয়ামী লীগের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন তদন্ত করতে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পার হতে চললেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিষয়টি নিয়ে নীরবতা পালন করছে। এই নীরবতাকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে বহুল সমালোচিত এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি তুলছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শেষে গত ৮ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। বহুল সমালোচিত এ লেনদেনের কমিটি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তিন সপ্তাহ পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নীরবতাকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে বহুল সমালোচিত এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি তুলছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।

গত ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড উপজেলার কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের কল রেকর্ডসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিন। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হলে অভিযোগ তদন্তের দাবি করে একটি যৌথ বিবৃতি দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তার তিন দিনের মাথায় এই তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলরা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারাও অবগত। ফলে এসব তথ্য যাচাইবাছাই করে সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। আর যাচাইবাছাইয়ের জন্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে তাদের।

জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গত ৮ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কাছে জমা দেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর এই অভিযোগের ‘অধিকতর তদন্তের’ জন্য দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্র ঘোষিত তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন নাহিদ হাসান জিতু। তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় কেন লাগছে— চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, ‘আমাদেরকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে যা যা পেয়েছি সব আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অথরিটি হলেন আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই বিষয়ে উনাদের সাথে কথা বলুন।’

এই বিষয়ে কথা বলতে দুই দিন ধরে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে কল করা হলেও তারা সাড়া দেননি। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক নাজির আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা জটিল রাজনৈতিক বিষয়, এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে… রিপোর্টগুলো আমাদের হাতে আছে, আমরা রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে ওখানকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে… বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাপারটা জানেন সবকিছু…সবার সাথে কথা বলে এটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে। এটা নিয়ে বসা হবে।’

তদন্ত করার পরেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘প্রতিবেদনের সাথে অনেকগুলো তথ্য উঠে আসছে। অনেকগুলো ইনফরমেশন উঠে আসছে। যেগুলো যাচাইবাছাই পর্যালোচনা শলাপরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।’

তবে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ইমেজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল হুদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সংগঠনের স্বার্থে এই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত। যদি অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অভিযোগ মিথ্যা হলে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া দরকার।’

এছাড়া এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অবস্থান রহস্যজনক— এমন দাবি করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটা উপজেলা কমিটি গঠনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠল। এত স্পর্শকাতর একটা ঘটনার কল রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর তদন্ত কমিটি করতেই লাগলো ১২ দিন। এরপর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরেও ১৮ দিন পার হয়ে গেল, অথচ সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এটা কেমন যেন রহস্যজনক। এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন যাই হোক— সেটা সকলের জানা উচিত। আমরা এটি প্রকাশের দাবি জানাই।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!