সীতাকুণ্ডে এমপি দিদারের ডিপোতে গুলি করে লরিচালক হত্যা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বন্দর টোল সড়কে স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মালিকানাধীন গাড়ির ডিপোতে গুলিতে করে এক লরিচালককে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডে এমপি দিদারের মালিকানাধীন দিদার অ্যান্ড ব্রাদার্সের (ড্যাব) ডিপোর ফোরম্যান মাসুমই সরাসরি গুলি করেছেন বলে জানা গেছে।

নিহত লরিচালক শাহজাহান ওরফে সাজু (৪৮) একই কোম্পানিতে লরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা। বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুর তিনটার দিকে টোল রোডের কালু শাহর মাজার এলাকায় এ ঘটনার পর বিকলে সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ লরিচালক।

সীতাকুণ্ড থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম শেখ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোড়ে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে গুলিতে এক লরিচালক খুন হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’ তবে হাসপাতালে যারা গুলিবিদ্ধ লরিচালককে এনেছেন, তারা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ডের টোল রোডের এমপি দিদারুল আলমের মালিকানাধীন লরির ডিপো থেকেই তাকে ধরে আনা হয়।

হত্যার মোটিভ ও জড়িত কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম শেখ বলেন, ‘এ ঘটনা কেন এবং কীভাবে ঘটেছে আমরা তদন্ত করছি। এছাড়া এখনো পর্যন্ত কাউকেই আটক করা যায়নি।’

এদিকে সংসদ সদস্য দিদারুল আলম নিজ ডিপোতে লরি চালকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত নায়েক শীলব্রত বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের টোল রোডে একটি লরির ডিপোতে গুলিবিদ্ধ সাজু নামে এক চালককে বিকেল ৪টার দিকে তার মামা মুজিবর রহমান ও মাসুম নামে দুজন একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে আনেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু লরিচালক মারা যাওয়ার পরপরই মাসুম নামে ওই লোক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মালিকানাধীন দিদার অ্যান্ড ব্র্যাদার্সের (ড্যাব) ডিপোতে বুধবার দুপুর ২টার দিকে এমপি দিদারের ব্যবসায়িক পার্টনার রাশেদের গাড়িতে করে সাজুকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুপুর আড়াইটার দিকে কোম্পানির ফোরম্যান মাসুম লরি চালক সাজুকে পেটে গুলি করে। মারা গেছে ভেবে প্রথমে টোল রোডের পশ্চিমে সাগর পাড়ে ফেলে দিলেও পরে সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মাসুম ও সাজুর মামা মজিবুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনেন।

এদিকে রাত সাড়ে দশটার দিকে নিহত লরিচালকের মামা মজিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি সাজুর মামা না। উনি থানায় একটি বৈঠকে আছেন।’

‘ভাগ্নেকে হাসপাতালের মর্গে রেখে কেন মিটিং করছেন আর আপনিই বা কে’—এমন প্রশ্নের জবাবে অপর প্রান্ত থেকে বলেন, ‘আমি সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে মোবাইল আমাদের হেফাজতে রাখছি। আর কেন রাখছি সেটা কী আপনাকে বলতে হবে?’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!